বিশেষ সাক্ষাৎকারে গবেষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার নূহ-উল-আলম লেনিন রোহিঙ্গা সমস্যা, উন্নয়ন, গণতন্ত্র এবং শান্তির প্রশ্নে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। মুখে যতকিছুই বলুক না কেন, সেই নির্বাচনে বিএনপিও অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশের গণতন্ত্র আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। এই আশাবাদের কারণÑ সংবিধানের একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া বিএনপি মানুষকে মোবিলাইজড করতে পারেনি যে তাদের দাবিতে মানুষ মাঠে নেমে আসবে। জনগণ এটা বোঝেছে সংবিধানের আওতায় নির্বাচন করতে হবেÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টাম-লীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই যে নিরপেক্ষ, দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে সে কারণে ইতোমধ্যেই তারা একটা শ্রদ্ধার আসন লাভ করেছে। এখনো পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ঘোরতর কোনো অভিযোগ তুলতে পারেনি। কমিশন কোনো পক্ষপাতমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাও বলতে পারেনি। রাজনৈতিক কারণে যতকিছুই বলুক না কেন, নির্বাচনে তারা আসবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন মত বিনিময় করে থাকে। এটা তাদের একটা রুটিনওয়ার্ক। গণতন্ত্র হচ্ছে প্রত্যেকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু কোনো একটা বিষয়ে সবাইকে একমত হতে হবে গণতন্ত্রে এমন কোনো বিধান নেই। তবে তো সবাই একটা দল করলেই হয়। অনেক দল থাকবে কেন। সুতরাং প্রতিটি দল তার নিজ নিজ মতামত নির্বাচন কমিশনকে দিবে কীভাবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, নির্বাচনের প্রথম শর্ত হচ্ছেÑ সংবিধানের বিধান মেনে সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা। এখন বিএনপি যদি বলে যে তার শর্তে নির্বাচন হতে হবে, ঠিক বিপরীতে গিয়ে আওয়ামী লীগও তো বলতে পারে আমার শর্তে নির্বাচন হতে হবে। জাতীয় পার্টি বা অন্য কোনো দলও তো বলতে পারে আমার শর্তে নির্বাচন হতে হবে। সংবিধানের আওতার মধ্যে থেকে কীভাবে সবার মতামতগুলো একত্র করা যায়, সমন্বয় করা যায়, ভালো জিনিসগুলো নেওয়া যায় সেটা দেখতে হবে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। বিএনপি সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ঠেকানোর কথা বলেছিল। কিন্তু তা তারা ঠেকাতে পারেনি। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ফলে সংসদে তাদের ভূমিকা হারিয়েছে, দল নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। অন্যদিকে নির্বাচন প্রতিহতের নামে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। জ্বালাও-পোড়া করেছে। ২০১৫ সালে টানা তিনমাস অবরোধ করল। এতকিছুর করেও কিছু করতে পেরেছে? পারেনি। বরং জনগণ থেকে তারা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল এমনটি করতে পারে না। তবে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে।
রোহিঙ্গা, উন্নয়ন এবং শান্তির প্রশ্নে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ। বিএনপি তার অনিয়ম-দুর্নীতি, জ্বালাওপোড়াও এবং যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে ঘাঁটছাড়া বাঁধা থেকে তারা একচুলও সরে আসেনি। আমি মনে করি, বিএনপি যদি এই সদিচ্ছাই প্রমাণ করতে পারত যে আমরা সংবিধানের আওতায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। এবং আসুন সংবিধানের আওতায় থেকেই নির্বাচনকে আরও কীভাবে অর্থবহ করা যায় সে ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করি, তখন আওয়ামী লীগের ওপর একধরনের নৈতিক চাপ পড়ত। সেটা কী তারা করতে পেরেছে। পারেনি।