প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন জরুরি
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত জালিয়াতি চক্র যেভাবে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করা শুরু করেছে মনে হয় না তা একেবারে বন্ধ করা যাবে। পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে পরিবর্তন আনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। বিশেষ করে এমসিকিউ সিস্টেমে যে পরীক্ষা পদ্ধতি তার আর ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা নেই। সেক্ষেত্রে যত সময়ই প্রয়োজন হোক না কেন, ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের লিখতে দিতে হবে, লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন আগে ছাপানো যাবে না। এবং ভর্তি পরীক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক প্রশ্ন দিতে হবে। একটা বিষয় সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্ন করতে হবে। কোনোভাবেই প্রশ্ন ছাপানো আর এমসিকিউ সিস্টেমে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। এক সময় শিক্ষার্থীরা নকল করত। ছাত্ররা ছোট কাগজে করে লিখে নিয়ে আসত, জ্যামিতি বক্সে লিখে নিয়ে আসত এসব আরও ৭০-৮০ বছর আগে ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই নকলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভিভাবকেরাও। এসব অভিভাবকেরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রশ্নপত্র দেখার জন্য, প্রশ্নপত্র কেনার জন্য সারারাত ইন্টারনেটে বসে থাকে। এখন আর শুধুমাত্র ছাত্রদের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। অনেক শিক্ষক আছেন যারা এসব চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা হয়তো সমাজের অন্যান্য জায়গায় অধপতন দেখে শিক্ষার ক্ষেত্রেও এসব অনৈতিক কাজে তারা জড়িয়ে পড়ছে। এবার ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কানের মধ্যে ঢুকিয়ে পরীক্ষা হলে এসেছে এবং এটা ঠেকানো গেছে। কিন্তু দেখা গেল দশ বছর পরে আরও অত্যাধুনিক ডিভাইস আসবে, যা শরীরে ঢুকিয়ে নিয়ে এলে তখন কিভাবে এটা ঠেকাবে। অতএব যে পরীক্ষা পদ্ধতি আছে তা সম্পূর্ণ পরিবর্তন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
বর্তমানে এমসিকিউ গোল্লাভরাট করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় এটা নিয়ে আর কোনো এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ নেই। এটা কোনো ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি হতে পারে না। এ্যাডমিশন টেস্টের ক্ষেত্রে যে প্রশ্নপত্রগুলো ছাপানো হয় তা আগে থেকে ফাঁস হওয়ার সুযোগ খুব কম। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নব্বই হাজার, এক লাখ পরীক্ষার্থী এ্যাডমিশন টেস্ট দেয় তাদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ঢাকার বেশিরভাগ স্কুল-কলেজে সিট প্ল্যান করা হয়। এর ফলে সব জায়গায় একইভাবে পরীক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। এ ধরনের পরীক্ষায় যেটা হয় প্রশ্নপত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই জালিয়াতি চক্র তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য মোবাইল ফোনসহ আরও আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করে থাকে। কারণ এসব পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষা শুরু হওয়ার মোটামুটি এক থেকে দুই ঘন্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে যায়। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য কেউ ধরা পড়েনি, তাদের ধরা হয়েছে প্রশ্নের উত্তর বলে দেওয়ার জন্য। অর্থ্যাৎ প্রশ্ন যেকোনোভাবে সংগ্রহ করে ডিভাইসের মাধ্যমে লাইভে উত্তর পাঠিয়ে দেয়। এবার না হয় এই ডিভাইস ধরা পরেছে কিন্তু আগামিতে কী ধরনের ডিভাইস তারা ব্যবহার করবে সেটা তো আমরা বলতে পারি না। কারণ সারাবিশ্বে বিশেষ করে চীনে এ ধরনের নতুন নতুন ডিভাইস প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে। সর্বশেষ যেটা হচ্ছে এ পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে পরিবর্তন না করে আর এভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কোনো মানে হয় না।
পরিচিতি: উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান