পদ্মা সেতু প্রকল্প আমাদের সক্ষমতার প্রতীক : সংসদীয় কমিটির সভাপতি ৪ নভেম্বর পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যাবে সংসদীয় কমিটি
আসাদুজ্জামান স¤্রাট : জাতীয় সংসদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আগামী ৪ নভেম্বর পদ¥া বহুমুখী সেতুর বাস্তবঅগ্রগতি পরিদর্শনে যাবে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর ১ম স্প্যান সফলভাবে স্থাপিত হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা জাতির জন্য গৌরবের। এই প্রকল্পে যাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অবহেলা না থাকে তা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করছে সংসদীয় কমিটি। ইতিপূর্বে কয়েক দফায় সংসদীয় কমিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। এদিকে সংসদীয় কমিটিতে দেয়া পদ্মা সেতুর অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর মূল প্রকল্পে ৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। মূল সেতুর চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১শ’ ৩৩ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৪৯ শতাংশ। সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৭ শতাংশ। ৩০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) খুঁটির (পিয়ার) ওপর স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নং খুঁটির ওপর বসানো হয়েছে। শিগগিরই অন্যান্য স্প্যানও বসানো হবে। ৩৭ থেকে ৪২ নম্বর পর্যন্ত ছয়টি পিয়ার এখন শেষ পর্যায়ে। শিঘ্রই শেষ হচ্ছে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারের কাজ। ৩৮ পিয়ারের সাথে যুক্ত হয়ে এই দু’ পিয়ার ধরে আরও দুইটি স্প্যান বসবে শিঘ্রই। স্প্যানের মাঝ বরাবর নীচের লেনে চলবে ট্রেন। ওপরে কংক্রিটের চার লেনের সড়কে চলবে গাড়ি। তাই এই স্প্যানের ওপরে রাস্তা এবং নিচে ট্রেন লাইন স্থাপন করা হবে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় সাড়ে ৪৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুতে মোট ৪২টি পিলার থাকবে। এর মধ্যে ৪০টি পিলার নির্মাণ করা হবে নদীতে। দুটি নদীর তীরে। নদীতে নির্মাণ করা প্রতিটি পিলারে ছয়টি করে পাইলিং করা হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য গড়ে প্রায় ১২৭ মিটার পর্যন্ত। একটি পিয়ার থেকে আরেকটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে দুটি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এছাড়া দু’পাড়ের সংযোগ সেতুসহ সেতুটি ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ।
নদীতে মূল সেতুর মোট ২৪০টি পাইলের মধ্যে ৭৫টি পাইল বসেছে। এছাড়াও দু’পাড়ের দু’টি ট্রান্সজিশন পিয়ারের ৩২টির মধ্যে ১৬টি স্থাপন হয়েছে। এখন বাকী মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর ট্রান্সজিশন পিয়ারের ১৬টি পাইল। এটির কাজ এখনও শুরু হয়নি। এছাড়া জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর ১৮৬ টি পাইল বসেছে। এখানে আর মাত্র ৭টি পাইল বাকি সংযোগ সেতুর (ভয়াডাক্ট) জন্য। আর মাওয়ায় এ পর্যন্ত সংযোগ সেতুর ১৭২টির মধ্যে ৭টি পাইল বসেছে।
সংসদীয় কমিটি পদ্মা সেতুর মূল সেতু ছাড়াও দু’পাড়ের সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ কাজের অগ্রগ্রতিও পরিদর্শন করবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেন এমপি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। বিদেশী সাহায্য ব্যাতীত এতো বড়ো প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘটনা ঐতিহাসিক। সংসদীয় কমিটি পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রতিটি নির্মাণকাজের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। এ প্রকল্পের বিষয়ে কোন প্রকার গাফিলতি ও অবহেলা যাতে না হয় সেদিকে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন