মিটফোর্ড হাসপাতালে দালালদের উৎপাত ব্যবস্থাপত্রে নিষিদ্ধ ওষুধ লেখার অভিযোগ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও কাওসার মাহমুদ : স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে রোগীরা। এছাড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভারতীয় নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবস্থা পত্রে লেখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোগীদের বড় ডাক্তার ভাল চিকিৎসা আর কম খরচের প্রলোভনে আশপাশের বিভিন্ন নাম স্বর্বস্ব ক্লিনিক ও হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নেয়া হচ্ছে। পুরান ঢাকার স্বল্প আয়ের মানুষ কম খরচে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে এসব দালালদের খপ্পরে পড়ছেন।
এদিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগের অর্থপেডিক বিভাগে প্রতিদিন একাধিক বহিরাগত ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এদের মধ্যে ডা. মাইনুল হাসান চিস্তি, ডা. ফয়সাল ও তানভির অন্যতম। এরা হাসপাতালের ১ নম্বর ভবনের নিচ তলার ১১৬, ১১৭ ও ১১৯ নম্বর কক্ষে বসে প্রতিদিন রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। রোগীর ব্যাবস্থাপত্রে তারা ভারতীয় নিষিদ্ধ ওষুধ লিখছেন অহরহ। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে হাইব্রিট ট্যাবলেট, পিমিও ক্যাপসুল, নাটকল ট্যাবলেট, বাসিল ক্যাপসুল, ক্যালজিম ট্যবলেট, ওক্সানা ও কিট এম বার সিরাপ প্রভৃতি ভারতীয় ওষুধ রোগীদের প্রেসক্রাইব করছে। আর এসব ওষুধ বাজারজাত করছেন হাসপাতালের ষ্টাফের ছেলে পরিচয়দানকারী জিসান নামের এক ব্যক্তি। এসব ওষুধ বিক্রির বিনিময়ে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন ওই ডাক্তারদের। এসব নিষিদ্ধ ওষুধ মিটফোর্ডের নির্ধারিত কয়েকটি ফার্মেসীতে চুক্তিতে সরবরাহ করছেন বলে জানা গেছে। এসব ফার্মেসীগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আরাফাত মার্কেটের রিতু ড্রাগ, কথা ড্রাগ ও কেরানীগঞ্জ ফার্মেসী। সোয়েব মার্কেটের উপশম ফার্মেসী, সাথিল ফার্মেসী ও রেটিনা ফার্মেসী। এসব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মিটফোর্ড হাসপাতালে রোগীদের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়ে চুক্তিবদ্ধ ডায়গনষ্টিকে পাঠাচ্ছে কতিপয় চিকিৎসক। কথিত এসব ডায়াগনষ্টিক থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে অন্য কোন যায়গা থেকে পরিক্ষা করে রিপোর্ট আনলে তারা ফিরেও তাকাননা এসব চিকিৎসক। আবার কখনো ওইসব রিপোর্ট বাদ দিয়ে নতুন করে পরীক্ষা করাচ্ছেন রোগীদের।
হাসান নামে একজন রোগী জানান, মিটফোর্ড হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে তিনি কয়েকটি পরিক্ষা দিয়ে পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রেফার করেন। পরীক্ষাগুলোর সঠিক রিপোর্ট পেতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা করে আনি। এতে ওই ডাক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে খারাপ আচরণ করেন বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন, হাসপাতালে কর্মচারী ছাড়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। ওইসব ডাক্তাররা কলেজ অধ্যক্ষের আওতাধীন থাকায় এমন সমস্যা হচ্ছে। তারপরও কোনো ডাক্তার যদি নাম সর্বস্ব ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।