১১০ কোটিরও বেশি ‘অদৃশ্য’ মানুষের খোঁজ পেল রাষ্ট্রসংঘ
অরিজিৎ দাস চৌধুরি, কলকতা থেকে : তাঁরা আছেন। যার যেরকম অবস্থা সেভাবেই দিন গুজরান করছেন। অথচ খাতায়-কলমে তাঁদের কোনও অস্তিত্বই নেই। গোটা বিশ্বে প্রায় ১১০ কোটিরও বেশি মানুষের নিয়তি এমনটাই। কোনও পরিচয়পত্র নেই তাঁদের। ফলে সরকারের খাতায় তাঁদের নাম নেই। তাঁরা যেন অলীক মানুষ। রাষ্ট্রসংঘের এক রিপোর্টে সম্প্রতি এমনটাই তথ্য উঠে এল।
কারা এই অলীক বা অদৃশ্য মানুষ? রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, প্রাথমিকভাবে এঁরা এশিয়া ও আফ্রিকার বাসিন্দা। এবং বেশিরভাগই শিশু বা অল্পবয়সী। বিশ্বব্যাঙ্কের ‘আইডেন্টিফিকেশন ফর ডেভলপমেন্ট’ প্রকল্পের উদ্যোগেই সন্ধান মিলেছে এই বিপুল সংখ্যাক মানুষের। এঁরা পৃথিবীতে আছেন। কিন্তু বিভিন্ন দেশের সরকারি খাতায় তাঁদের কোনও অস্তিত্ব নেই। কেননা সরকার নির্দিষ্ট কোনও পরিচয়পত্র নেই তাঁদের। কেন এই পরিস্থিতি? জানা যাচ্ছে, প্রথম কারণ অজ্ঞতা। পরিচয়পত্র যে দরকার, তা অনেকে বোঝেনই না। ফলে এ জিনিস তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন। একমাত্র স্কুলে ভরতি হওয়ার সময় তবেই কোনও পরিচয়পত্র লাগে। ফলে তার আগে পর্যন্ত সরাকরিভাবে শিশুদের কোনও অস্তিত্ব থাকেই না। এই সংখ্যা প্রকট বিশেষত সেই সব জায়গায়, যেখানে দারিদ্র, মহামারি, বিছিন্নতাবাদ প্রবল। জাতি পরিচয়ে হিংসা ও সন্ত্রাসের কারণে বহু মানুষ নিজেদেরকে কোনও গোষ্ঠীভুক্ত বা কোনও দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেও নারাজ। কোথাও আবার ধর্ষণের মতো ঘটনার ফলে বহু জন্ম হচ্ছে, যা নথিভুক্তহীন হয়েই থেকে যাচ্ছে। ফলে বহুসংখ্যক মানুষ নিজেদের পরিচয় এড়িয়েই জীবন-যাপন করেন।
এই অদৃশ্য জনসংখ্যার ফলে সরকারি প্রকল্প ও তার বাস্তবায়নের মধ্যে বিরাট একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। সরকারি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প ও সেই পরিষেবা পৌঁছানোর মধ্যে বড় শূন্যস্থান থেকে যাচ্ছে। শিশুশ্রমিকে পরিণত হওয়া বা শিশুবিবাহের মতো ঘটনাও ঘটছে এর ফলে। যার কোনও হিসেবই থাকছে না বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে। এই পরিচয়হীন অল্পবয়সীরা সহজে সন্ত্রাস ও হিংসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে আইডেন্টিফিকেশন ফর ডেভলেপমেন্ট প্রোগ্রামের তরফে।