চোখের পর্দার গুরুত্ব
মাহমুদুল হক জালীস
ইসলাম মানবজাতির প্রাত্যহিক আদর্শ জীবনব্যবস্থা। মানুষের চলন-বলন থেকে শুরু করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর বিধিবিধান ও আদর্শ রয়েছে। যা পালনে মানুষের ইহকাল এবং পরকাল শান্তিতে কাটবে। আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন- আপনি ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গকে হেফাজত করে এবং তাদেরকে যা প্রকাশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাছাড়া অন্য কিছুর সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভূক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আন-নূর: ৩২)
সূরা নূরের একত্রিশ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিন পুরুষদের দৃষ্টি সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বত্রিশ নং আয়াতে নারীদের প্রতি অর্থাৎ ঈমানদার নারীদের দৃষ্টি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি মুমিন পুরুষদেরও দৃষ্টি অবনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। মুফাস্সিরগণ দৃষ্টি নত রাখার অর্থ করেছেন, দৃষ্টিকে এমন বস্তু থেকে ফিরিয়ে নেয়া যে বস্তু দেখা শরীয়তে নিষিদ্ধ ও অবৈধ। এমনিভাবে ইবনে কাসীর এবং ইবনে হাইয়্যান (রহ.) এর তফসীর করেছেন বেগানা নারীর প্রতি খারাপ নিয়তে দেখা হারাম এবং বিনা নিয়তে দেখা মাকরুহ এ বিধানটি এর অন্তর্ভূক্ত। কোন নারী অথবা পুরুষের গোপনীয় অঙ্গের প্রতি দেখাও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে। এছাড়া কারো গোপন তথ্য জানার জন্য তার গৃহে উঁকি মেরে দেখা এবং যেসব কাজে দৃষ্টি ব্যবহার করা শরীয়ত নিষিদ্ধ করেছে, সেগুলো এর অন্তর্ভুক্ত। যৌনাঙ্গ সংযত রাখার অর্থ এই যে, কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার যত পন্থা আছে, সবগুলো থেকে যৌনাঙ্গকে সংযত রাখা। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী (রাহ.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ইচ্ছা ছাড়াই হঠাৎ কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি পতিত হলে সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও। (ইবনে কাসীর)
হযরত আলী (রা.)থেকে বর্ণিত- প্রথম দৃষ্টি মাফ, এবং দ্বিতীয় দৃষ্টি গোনাহ। এর উদ্দেশ্যও হচ্ছে, প্রথম দৃষ্টিপাত অকস্মাৎ ও অনিচ্ছাকৃত হওয়ার কারণে ক্ষমার্হ। নতুবা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম দৃষ্টিপাতও ক্ষমার যোগ্য নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আমাদেরকে দৃষ্টি হেফাজত করার তৌফিক দান করুক। আমীন।
লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মুহম্মদপুর, ঢাকা।