জীবে-দয়ার গুরুত্ব ও ফযীলত
মুহাম্মাদ আবু আখতার
সৃষ্ট-জীবের প্রতি দয়াময় আল্লাহর ভালোবাসার অন্ত নেই? তাই তার সৃষ্ট-জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন করলে তিনি সন্তুষ্ট হন? অপরদিকে তার সৃষ্ট-জীবকে কষ্ট দিলে তিনি অসন্তুষ্ট হন? এ কারণেই দেখা যায়, বনী ইসরাইলের জনৈকা মহিলা একটি বিড়ালকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেললে তিনি তার উপর অসন্তুষ্ট হন এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেন? পক্ষান্তরে জনৈকা পাপিষ্ঠ মহিলা তার ওড়নার আচল ছিঁড়ে মোজায় বেঁধে কূপের গভীর হতে পানি তুলে তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করালে আল্লাহ খুশি হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন?
যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টজীবের প্রতি অনুগ্রহ করে সে ব্যক্তি আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় পাত্র? এ সম্পর্কে হজরত আনাস (রা) এবং হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, গোটা সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পরিবার স্বরুপ? আল্লাহ তায়ালার কাছে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় যে ব্যক্তি তার সৃষ্টির প্রতি দয়া করে?(বায়হাকী)
সৃষ্টি জগতের প্রতি দয়া প্রদর্শন করলে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ দয়া লাভ করা যায়? এসম্পর্কে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহকারীদের প্রতি দয়াময় আল্লাহ অনুগ্রহ বর্ষণ করেন? সুতরাং তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি অনুগ্রহ কর, তাহলে আকাশের মালিক (আল্লাহ তায়ালা) তোমাদর ওপর অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন?(তিরমিযী ও আবু দাউদ)
সৃষ্টিজগতের মধ্যে মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি? তাই মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ? সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না সে আল্লাহ তায়ালার পূর্ণ রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে ? এ প্রসঙ্গে হজরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না আল্লাহ তায়ালাও তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না? (বোখারী-মুসলিম)
বিধবা এবং মিসকীনদের প্রতি দয়া প্রদর্শনকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথের মুজাহিদ এবং দিনে রোযা পালনকারী এবং রাতে ইবাদতকারীর সমান সওয়াবের অধিকারী হবে? এ ব্যাপারে হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “বিধবা ও নিঃস্বদের প্রতি দয়া প্রদর্শনে গমণকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে গমণকারী ব্যক্তির মত? রাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, আমার ধারণা রাসূলুল্লাহ (সা) এটাও বলেছেন, বিধবা ও নিঃস্বদের সাহায্যে গমণকারী ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মত যিনি রাতজেগে ইবাদতে কখনো অলসতা করেন না এবং দিনে কখনো রোজা ভাঙ্গেন না? (বোখারী-মুসলিম)
অসহায় ইয়াতীমকে লালন পালনকারী ব্যক্তি এমন অতুলনীয় মর্যাদা লাভ করবে যে, উক্ত ব্যক্তি জান্নাতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর অতি নিকটবর্তী থাকবে? এ ব্যাপারে হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আমি ও ইয়াতীমের লালনপালনকারী ব্যক্তি চাই সে ব্যক্তি ইয়াতীমের নিজের হোক বা অন্য কেউ হোক জান্নাতে এরূপ হব ? এটা বলে রাসূলুল্লাহ (সা) নিজের তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন? তখন দুই আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ব্যবধান ছিল? (বোখারী)
মানুষের মধ্যে ঈমানদারগণ আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি প্রিয় ? তাই ঈমানদারগণের পারস্পরিক দয়া প্রদর্শনের ব্যাপারে ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে? তাদের পরস্পর দয়া ও ভালোবাসার বন্ধন কিরূপ মজবুত হবে এ ব্যাপারে হজরত নো’মান ইবনে বশীর (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, “তুমি ঈমানদারগণকে তাদের পারস্পারিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়ার ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে? দেহের কোন একটি অঙ্গে যদি ব্যথা পায় তবে শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জাগরণ ও জ্বরের মাধ্যমে তার ব্যাথায় অংশীদার হয়? (বোখারী-মুসলিম)
হজরত আবু মুসা (রা) হতে বর্ণিত আরেকটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীর বা ইমারতের মত যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় করে? এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (সা) এক হাতের আঙ্গুলি অপর হাতের আঙ্গুলির মধ্যে প্রবেশ করালেন?(বোখারী-মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ (সা) মুসলমানদের পরস্পরকে ভাই ভাই ঘোষণা করে পরস্পরের প্রতি দয়া প্রদর্শনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন ? এ ব্যাপারে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, “মুসলমান মুসলমানের দ্বীনী ভাই? কোন মুসলমান অন্য মুসলমানের ওপর জুলুম করবে না এবং কোন শত্রুর হাতে ছেড়ে দিয়ে তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে না ? যে ব্যক্তি কোন মুসলমান ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে আল্লাহ তায়ালা তার অভাব মোচন করবেন ? যে ব্যক্তি কোন মুসলমান ভাইয়ের দুঃখ কষ্ট লাঘব করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দুঃখ কষ্ট লাঘব করবেন? যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের দোষত্রুটি ঢেকে রাখবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি ঢেকে রাখবেন? (বোখারী-মুসলিম)