মানুষের বসবাস উপযোগী অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা সম্পন্ন সমাজ চাই
দারিদ্র্য সীমার হিসেবটা একেক দেশে একেক রকম। জাতিসংঘের সাধারণ হিসেবে হচ্ছে, দৈনিক ২ ডলারের কম যারা আয় করে, তাদেরকে দারিদ্রসীমার নিচে ধরা হয়। ৫ সদস্যের একটি পরিবারের দৈনিক যদি ৮০০ টাকার কম আয় হয়, তাহলে জাতিসংঘের হিসেবে সে দারিদ্রসীমার নিচে। বাংলাদেশের যে গার্মেন্টস শ্রমিক ৫৩০০ টাকা বেতন পান, বেসিক ৩০০০ টাকা, ১২০০ টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে ৫৩০০ বা ৬০০০ টাকা বেতন পান, সে কিভাবে দারিদ্র্য সীমার ওপরে উঠবে? সে তো কাজ করেও দরিদ্র। ফলে আমরা কোন বিবেচনায় তাকে দারিদ্রসীমার ওপরে তুলব, সেটাকে যদি পরিষ্কার করা না হয়, তাহলে তো দারিদ্র্য সীমাটা একটা ঘোষণার মধ্যেই থাকবে। এখন ঢাকা শহরে যে ১৫০০০ টাকা রোজগার করে, সে কি দারিদ্রসীমার ওপরে না নিচে? এটা আমরা কিভাবে বিবেচনা করব? ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বিবেচনা করব, নাকি ১৫ হাজার টাকায় কি কি জিনিস তিনি কিনতে পারেন, বাসা ভাড়া কত দিতে হয়, খাবারের খরচ কত বিবেচনা করব? সন্তানের শিক্ষা দীক্ষা, নিজের বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তা। এ সমস্ত কিছুই তো তাকে বেতনের টাকার ওপরে নির্ভর করতে হয়। এই বেতন কি তার জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে? যে শ্রমিক অথবা সাধারন মানুষের চাকরি যে কোনো মুহূর্তেই চলে যেতে পারে। যে কোনো সময়ের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে চাকরিটা, সে কি করে দারিদ্রসীমার ওপরে উঠবে? যে কৃষক বছরে ১০০ দিনের বেশি কাজ করতে পারে না, দিন মজুর সে দারিদ্র্য সীমার ওপরে কি ভাবে আসবে? আমরা যদি মাথা পিছু আয় হিসেব করি, ১৬০৪ ডলার মাথা পিছু আয় সে দিকে হিসেব করলে ৫ সদস্যের একটি পরিবারের মাসিক হিসেব হয় ৫৩০০০ টাকা। এটা যদি আমি গড়ের হিসেব করি, এই গড়ের নিচে কতগুলো মানুষ আছে? কতটা পরিবার আছে আমাদের বাংলাদেশে যারা ৫৩ হাজার টাকা মাসে ইনকাম করে? ফলে আমরা যখন অর্থনীতির মারপ্যাচে দেখি, যে আমাদের দারিদ্রসীমা অতিক্রম হয়েছে, তখন বাস্তবে কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে, একথাটা পরিষ্কার হয়ে যায়। অর্থমন্ত্রীর হিসেবটা না দেখে বাজারের হিসেবটা দেখতে হবে। কৃষক কি অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে সেটা দেখতে হবে।
এবং আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ যারা অর্থনৈতিক চাপ এবং শারীরিক চাপের মধ্যে কাটে, সেটা যদি হিসেব করি তাহলে পারসেন্টেজ হিসাব না করে আমরা আমাদের সকল মানুষের বসবাস উপযোগি অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা সম্পন্ন সমাজ তৈরি করতে পেরেছি। এটা যদি অর্থমন্ত্রী বিবেচনায় রাখতেন তাহলে বাগাড়ম্বর করা থেকে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হতেন। দুর্নীতিটা বন্ধ করতে উদ্বুদ্ধ হতেন। লুটপাটটা ঠেকানোর ক্ষেত্রে তারা সচেষ্ট হতেন।
পরিচিতি : অর্থনীতিবিদ
মতামতগ্রহণ : সানিম আহমেদ
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ