ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পরিবর্তন দরকার
মোস্তফা মামুন
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটি খুবই বাজে সফর হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এরকম পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। কিন্তু একি সঙ্গে আমি এটা মনে করি, এই সফরটি আমাদের জন্য একটা শিক্ষা। শিক্ষা বলতে আমরা আসলে ঠিক কোন জায়গায় আছি, শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে আমাদের ব্যবধান কতটুকু সেটা আমরা বুঝতে পারলাম। দেশে যেভাবে আমরা খেলি সেখানে বড় বড় দলগুলোর সঙ্গে দেশের শক্তি, কন্ডিশন, উইকেট ব্যবহার করে শক্তির ব্যবধানটা অনেক কমিয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু বিদেশের মাটিতে বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড এসব দেশের সঙ্গে টেস্ট খেলতে গেলে, বড় ইনিংস খেলতে গেলে আমাদের যে সক্ষমতার ঘাটতি আছে, এটা আসলে এই সিরিজটার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। আমরা যদি টেস্ট সিরিজের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে বাউন্স বল খেলায় যে আমাদের অক্ষমতা আছে সেটা প্রমাণিত হলো। আমরা ভেবেছিলাম, বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা এরকম বাজে পরিস্থিতিতে পড়িনি এবং নিজেদের দেশে শর্ট বল ভালই খেলি। সে জায়গা থেকে আমাদের ধারণা হয়েছিল যে আমরাতো সক্ষম হয়ে পরেছি। কিন্তু বিষয়টি ঠিক তা নয়। আমাদের দেশে শর্ট বলগুলোতে যে পেস থাকে আমাদের উইকেটের কারণে আমরা এটা বেশ ভালভাবেই সামাল দিতে পারি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওদের বোলাররা যে জায়গা থেকে বলটা তুলতে পারে, সেটা আমাদের পক্ষে খেলা, বলটাকে লিফট করা খুব একটা সহজ হয়ে ওঠে না। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, টেস্টে খারাপ করার কারণে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতেও খারাপ হয়েছে। কারণ, আমরা যদি লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাবো টেস্টের তুলনায় ওয়ানডেতে উইকেট কিন্তু বেশ ব্যাটিং সহায়ক ছিল। টেস্টে খারাপ করার কারণে দলে যে প্রেসারটা এসেছে, মূলত সেটার কারণেই পরবর্তীতে আর আমরা ভাল খেলতে পারিনি। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি যদি আগে খেলা হতো, তাহলে হয়তো ফলাফলটা আমাদের জন্য তুলনামূলক ভাল হতো। আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ড এই জিনিসটা ভাবতে পারে যে, যখন দেশের বাইরে সিডিউল করবে তখন খেলার সূচি করার সময় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ যেন আগে খেলা যায়। তাহলে হয়তো ভাল একটা শুরু করে কনফিডেন্সটা নিয়ে আমরা টেস্ট খেলতে পারবো। এ ধরনের সিরিজ খেলার আগে একটু বাড়তি প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার। আমাদের এ দল, আন্ডার নাইনটিন, এদের দিয়ে আরও বেশি করে খেলানো উচিত। কারণ, দেশের মাটিতে একটা প্লেয়ার যতই ভাল করুক, বিদেশে প্রথম সফর হলে একটু ঝামেলা হতেই পারে। সেক্ষেত্রে আন্ডার নাইনটিন ও এ দলকে বেশি বেশি ক্রিকেট খেলতে দিতে হবে। কারণ, এ দল এবং আন্ডার নাইনটিন এর যদি এরকম বিদেশে খেলার অভিজ্ঞতা থাকে, পরবর্তীতে তারা জাতীয় দলের হয়ে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দেশে তুলনামূলক কিছু ভাল উইকেট তৈরি করা দরকার, যাতে করে দেশের বাইরে গেলে উইকেটগুলো আমাদের পরিচিত মনে হয়। তারপর আমি মনে করি, আমাদের প্লেয়ারদেরও ইন্ডিভিউজুয়ালি ভাল খেলতে হবে। কারণ, বড় বড় ট্যুরে যাওয়ার আগে ভাল প্লেয়াররা নিজেরা একটা প্ল্যান করে যে, উইকেট কেমন হতে পারে, কিভাবে খেলাটা শুরু করা যেতে পারে। এটা হচ্ছে টেক সামথিং ফর মাইসেল্ফ। এই জিনিসটায়, আমার মনে হয় আমাদের প্লেয়ারদের মধ্যে ঘাটতি আছে। কারণ, এই সফরটিতে আমাদের ওই লেভেলের প্লেয়ারদের কিছু কিছু ভুল দেখেছি। যেটা আসলে পুরো টিমের মাধ্যমে হয় না। একজন ভাল খেলোয়াড়ের নিজের ব্যক্তিগত কিছু পরিকল্পনা থাকা দরকার। এর একটা অভাব লক্ষ্য করেছি। তারপর হচ্ছে টিম সিলেকশন, সেখানেও বেশ গোলমাল ছিল। শেষ টি-টোয়েন্টিতে আমরা দেখলাম মাত্র ছয়জন ব্যাটসম্যান নিয়ে আমরা খেলেছি, যেখানে টেস্ট খেলেছি আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে। টেস্টতো মূলত বোলারদের খেলা আর টি-টোয়েন্টি হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের খেলা। এই সফরটিতে প্রচুর গোলমেলে বিষয় লক্ষ্য করা গেছে। টিম ম্যানেজম্যান্টের মধ্যে যে ঐক্যের জায়গাটা দুর্বল, তারা যে কনফিউসড, এই জায়গাগুলোতে আমার মনে হয়েছে দুর্বলতা রয়েছে। এই জায়গাগুলোতে পরিবর্তন আনতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দল প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারবে বলে আশা করি।
পরিচিতি : ক্রীড়া বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ : সাগর গনি
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন