রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন পথে
অমিত গোস্বামী
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মিয়ানমারের ব্যর্থতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা হলেও ভারত সরকার সমর্থনের পৈতা ধরেই রেখেছে। এর কারণ ভারত চায় মিয়ানমারের সঙ্গে সর্ম্পক আরও গভীর করতে। এটা নয়াদিল্লির ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ বাস্তবায়নেরই অংশ। সম্প্রতি দেশ দুটির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ছে ব্যাপক হারে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। কী সেনা আমল, কী গণতান্ত্রিক আমল, সব সময়ই এ সম্পর্ক অটুট ছিল। বলা যায়, মিয়ানমারের পরীক্ষিত বন্ধু চীন। উত্তর কোরিয়া হাজার অন্যায় করেও যেমন সমর্থন পায় চীনের। মিয়ানমারও তেমনি সব কাজে চীনের ভালোবাসা পেয়ে থাকে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একাধিকবার রাখাইন প্রদেশের অবস্থা নিয়ে আলোচনা উদ্যোগ নিয়েও শুরু করতে পারেনি শুধু চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতায়। গত অক্টোবরে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিধনের ঘটনায় জাতিসংঘ তদন্তে এলেও সরকার ও সেনাবাহিনী সমর্থন জানায়নি, কোনো সহযোগিতা করেনি। কিন্তু চীন মনে করে, মিয়ানমার যা করছে ঠিক করছে। মিয়ানমারকে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের কূটনৈতিক সুরক্ষা দেওয়ার একাধিক কারণও রয়েছে। রাখাইন রাজ্যের কিয়াকফু এলাকায় বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চায় চীন। অবস্থান জোরদার করতে চায় ভারত মহাসাগরে। শুধু তাই নয়, গত এপ্রিলে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের বেইজিং সফরে দুই দেশের মধ্যে অশোধিত তেলের পাইপলাইন নির্মাণ নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার বিষয়েও আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।
বেইজিং সম্প্রতি আরাকানি রাজনীতিবিদদের সে দেশে আমন্ত্রণ জানায়। তাদের একজন হলেন আরাকান ন্যাশনাল পার্টির চেয়ারম্যান ড. আয় মং। কট্টর জাতীয়তাবাদী আয় মং অতিসম্প্রতি রাখাইন প্রদেশে সেনা মোতায়েন এবং ওই এলাকায় জরুরি অবস্থার দাবি জানায়। তিনি রোহিঙ্গা বিরোধী মানুষ। রোহিঙ্গাদের ওপর এত অত্যাচার, নির্যাতন চলছে, তবুও চুপ চীন।
কাজেই রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য সেই থেকে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো ঝুলে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সাত লাখের ওপর রোহিঙ্গা রয়েছে। সেনাবাহিনীর কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়নের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। বিশ্ব মিডিয়া রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে না পারায় সেখানে ঠিক কি হচ্ছে তা বলা মুসকিল। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনী ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালাচ্ছে। এর ফলে প্রতিদিন রোহিঙ্গারা দলে দলে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে।
পরিচিতি : কলামিস্ট
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন