ইসলামে পোশাক সৌন্দর্য্য
মুহাম্মাদ আবু আখতার
পোশাকের ধরণ ও স্থানকাল পাত্রভেদে পোশাকের হুকুমে ভিন্নতা রয়েছে?পোশাক পরিধান করা কোন ক্ষেত্রে ফরয, কোন ক্ষেত্রে হারাম, কোন ক্ষেত্রে মুস্তাহাব, আবার কোন ক্ষেত্রে মুবাহ। ফরয পোশাক হলো এতটুকু পরিধান করা, যা দ্বারা সতর আবৃত করা যায়। মুস্তাহাব হলো যার ব্যাপারে শরীয়ত উৎসাহ দান করেছে। যেমন- দু’ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করা। মাকরূহ ঐ পোশাক, যা পরিধান করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন- ধনীদের সর্বদা ছিন্ন ও পুরাতন কাপড় পরিধান করা। হারাম ঐ পোশাক, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। যেমন- পুরুষের জন্য ওজর ব্যতীত রেশমী কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি। পোশাক সম্পর্কিত রাসূলুল্লাহ (সা) এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস তুলে ধরা হল?
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রিয় পোষাক ছিল কামীস: হজরত উম্মে সালমা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) পোষাক হিসেবে ‘কামীস’ বা জামা সর্বাধিক পছন্দ করতেন।-(ইবনে মাজাহ.৪০২৭) পুরুষের পোশাক পরিধানের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি পুরুষের পোশাকের নিচের অংশ পায়ের গোড়ালী থেকে উপরে রাখার আদেশ করেছেন এবং গোড়ালীর নিচে পাজামা, লুঙ্গি, জামা বা কোন পোশাক পরিধান করা হারাম ঘোষণা করেছেন। হজরত আবূ হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইযারের বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নীচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে। (বোখারী) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর একটি প্রিয় পোষাক ছিল হিবারা বা ইয়ামানী চাদর। সে সময়ে পোশাকের বিখ্যাত স্থান ইয়ামানের তৈরি ডোরা ও কারুকার্য সম্বলিত সূতী বা কাতান প্রকৃতির চাদরকে ‘হিবারা’ বলা হতো। এগুলো কখনো লাল, কখনো নীল, আবার কখনো সবুজ ডোরাকাটা হতো। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো (ইয়ামানী তৈরি চাদর) হিবারা। (সহীহ বুখারী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীদেরকে সাদা রঙের কাপড় পরিধান করতে উপদেশ দিয়েছেন।হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করবে। তোমাদের জীবিতরা যেন সাদা কাপড় পরিধান করে এবং মৃতদেরকে সাদা কাপড় দিয়ে দাফন দেয়। কেননা, সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক। (সুনানে নাসাঈ) হজরত আনাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু (সা.) পুরুষদের জাফরানী রং-এর কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)
উপরোক্ত হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসের আলোকে মুসলিমের পোশাকের নীতি : ১. পুরুষের পোশাক রেশমী হবে না। ২. পোশাক সতর ঢাকার মতো হবে। ৩. পুরুষের পোশাক মহিলাগণ পরবে না। আর মহিলা পুরুষের পোশাক পরবে না। ৪. পোশাক যেন অহংকার প্রকাশার্থে না হয়। ৫.পুরুষরা টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করবে না। ৬. ইচ্ছাকৃতভাবে কাফিরদের সাদৃশ্য অবলম্বনার্থে তাদের পোশাক পরিধান করা যাবে না।