বিমানে ওঠার পর স্বজনদের কাছে বিকাশে টাকা চাইত প্রতারক জাবেদ
সুশান্ত সাহা : বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল নম্বরে ফোন করে যাত্রী সেজে কান্নাকাটি করে,কখনও মোবাইল,পাসপোর্ট, ভিষা বিমানের টিকিট হারিয়ে গেছে বলে জরুরি ভিত্তিতে টাকা পাঠাতে বলত প্রতারক জাবেদ। জরুরিভাবে টাকা পাঠাতে না পারলে বিদেশে যাওয়া হবেনা বলে। এ ছাড়াও প্রতারক জাবেদ কখনও নিজেকে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশ পুলিশের কর্মকর্তা, কখনও এয়ারলাইন্সের কর্মী পরিচয় দিয়ে ভয় দেখাত। জাবেদ তাদের বলত টাকা না দিলে তোমাদের যাত্রীর বিদেশে যাওয়া বাতিল হয়ে যাবে এই যাত্রী আত্মীয় স্বজনদের কাছে থেকে বিকাশে টাকা নিত। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার সময়ে সিআইডির নিজ কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম। এর আগে গত বুধবার বিমানবন্দরের আমর্ড পুলিশের সহযোগিতায় শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সার্ভিসের কর্মচারী সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি’র একটি দল। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. জাবেদ, দুই বিকাশের এজেন্ট মো. ইউসুফ এবং মো. মেহেদী হাসান।
মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, হাজারও প্রতারণার খলনায়ক জাবেদ ভোর ছয়টার সময়ে বিমানবন্দরে আসত। সেখানে সে বিদেশগামী যাত্রী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনদের তথ্য সংগ্রহ করত। পরে বিদেশীগামী যাত্রী যখন এমবারকেশন (ইডিকার্ড) ফরম পূরন করত তখন কিংবা তাদের ফরম পূরণে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের নাম-ঠিকানা ফোন নম্বর সংগ্রহ করত। আবার বিদেশগামী যাত্রীদের আত্মীয়দের সাথে আলাপ করেও তাদের তথ্য সংগ্রহ করত। পরে বেলা ১১ টার সময়ে সে বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে করে চলে যেত গাজীপুরের তার পরিচিত বিকাশের এজেন্টের দোকানে। তার পরিচিত এজেন্ট ৫০০ টাকার বিনিময়ে নতুন রেজিস্টেশন করা সীমের বিকাশ একাউন্ট খুলে দিত। এবং প্রতারণার কাজে সেই বিকাশ নম্বরগুলো ব্যবহার করত।
মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, বিদেশগামী যাত্রীরা বিমানে উঠে গেলে তাদের মোবাইলের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রতারক জাবেদ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের সংগ্রহ করা তথ্য দিয়ে যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল নম্বরে ফোন করে। বিদেশগামী যাত্রীদের আত্মীয়রা শেষ সময়ে প্রতারক জাবেদের কথামত বিকাশে জরুরি ভিত্তিতে টাকা পাঠাত। ওই যাত্রী বিদেশে যাওয়ার পর তার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারত এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। তারা অভিনব একটি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বিমানবন্দরে কয়েক হাজারের বেশি বিদেশগামী যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক জাবেদ।
সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, চলতি বছরের ১৭ মার্চ মোহাম্মদ আবুল বাশার তার ছেলেকে বিমানবন্দরে বিদায় দিয়ে বাসায় ফেরার পথে প্রতারক জাবেদের সঙ্গে কথা হয়। এসময়ে জাবেদর তার ছেলে সকল প্রকার তথ্য নেয় বাশারের কাছ থেকে। পরে প্রতারক জাবেদ তার কাছ থেকে প্রতারণা করে বিকাশের মাধ্যমে ৩৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে বাশারে ছেলে বাহারাইনে পৌছানোর পর সে জানতে পারে এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে তিনি এ ঘটনায় ১৮ মার্চ মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।
মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১২ থেকে কয়েক হাজারের মত লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। জাবেদ সৌদি আরবে পাঁচ বছরে থাকার পরে বাংলাদেশে এসে ১০ হাজার টাকা বেতনে বিমানবন্দরে কনকর্স হলের ইজারাদারের ভাড়া করা সিকিউরিটি এমকে ট্রেইডার্সে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি নেয়। চাকরি নিয়ে এই প্রতারণা শুরু করে কয়েক কোটি টাকা মালিক হয়েছে। প্রতারক জাবেদ বিলাশবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী পাশ। প্রতারক জাবেদ প্রতিটি যাত্রীর আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত তিন মাসের পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে গত তিনমাসে সাড়ে তিনশ লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে জাবেদ। তার বিরুদ্ধে বিমানবনন্দর থানায় কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি জিডিএবং অন্য থানায় কয়েকটি মামলাও রয়েছে। তার গাজীপুরে মার্কেট বিশালবহুল বাড়ি সহ কয়েকটি ভবনের মালিক।