৭ মার্চের ভাষণের মতো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেল কানাডার দুই ঐতিহ্য
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে : ‘গিভ মি এ স্টোরি, অ্যান্ড আই উইল গিভ ইউ ওয়ান ইন রিটার্ন’ অর্থাৎ ‘একটা গল্পের বিনিময়ে আমিও আরেকটা বলবো’, এমন বক্তব্য দিয়েই ২০১৬ সালে ‘পেন’ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত লরেট সেভয়ের ‘ট্রেস : মেমোরি, হিস্ট্রি, অ্যান্ড দ্য আমেরিকান রেস’ গ্রন্থটির সূচনা। তাতে আমেরিকা মহাদেশে জাতিগত বিকাশের ইতিহাসটি ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে বিশ্বায়নের পরিসরে পরিব্যাপ্ত।
সম্ভবত তেমনি চিন্তার আধার থেকে ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো প্রবর্তিত ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’, যা দুই বছর অন্তর মিলিত আইএসি বা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত ও মহাপরিচালকের অনুমোদনে বিশ্বের তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহ্যগত মূল্যবোধগুলো নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আইএফএলএ বা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন এবং ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত আইসিএ বা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন আর্কাইভসে যুদ্ধবিগ্রহ ও লুণ্ঠন থেকে সুরক্ষার কার্যক্রম, যার সূচনা হয় ১৯৯৩ সালে পোল্যান্ডের পুলটাস্কে এবং এ পর্যন্ত প্রস্তরখ- থেকে সেলুলয়েড এবং পা-ুলিপি থেকে শব্দধারিত বিভিন্ন দেশের আবেদনকৃত ৪২৭টি ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কোর মিডিয়া কর্মকর্তা জর্জ পাপাজিয়ানিস প্রদত্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে নিযুক্ত আইএসির চেয়ারম্যান ড. আবদুল্লা আলরাইসির সভাপতিত্বে ১৪ জন বিশেষজ্ঞের কমিটি তাদের ২৪-২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় ২০১৬-১৭ সালের জন্য বিশ্বের ৭৮টি মনোনয়ন ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব করেন। ফলশ্রুতিতে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বকোভা তা অনুমোদন দেন।
এতে বাংলাদেশের একমাত্র ‘দ্য হিস্ট্রোরিক সেভেন্থ মার্চ স্পিচ অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মতো কানাডারও দুটি ঐতিহ্য যথাক্রমে ‘মার্শাল ম্যাকলুহান : দ্য আর্কাইভস অব দ্য ফিউচার’ এবং ‘মিক্সড ট্রেসেস অ্যান্ড মেমোরিজ অব দ্য কন্টিনেন্টস – দ্য সাউন্ড অব দ্য ফ্রেঞ্চ পিপল অব আমেরিকা’ স্থান পায়। এর প্রথমটি কানাডিয়ান কমিশন অব ইউনেস্কো সমর্থিত এবং লাইব্রেরি অ্যান্ড আর্কাইভস কানাডা ও ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো লাইব্রেরিজ কর্তৃক যৌথভাবে আবেদনকৃত। সেটি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদীর্ঘ সময়ের অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতি অঙ্গনের তাত্ত্বিক মার্শাল ম্যাকলুহান সম্পর্কিত, যিনি বর্তমান বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির জগতে বহুল ব্যবহৃত ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ ও ‘দ্য মিডিয়াম ইজ দ্য মেসেজ’ ধারণাটির জন্ম দেন। অপরটির আবেদনকারী বিষয়ে বিস্তারিত জানা না গেলেও আমেরিকা মহাদেশে কী করে ভালবাসা, মাধুর্য ও অকল্পনীয় বিষাদে পরিপূর্ণ ফরাসি ভাষার উচ্চারণে বিবর্তন ঘটেছে, তারই উপজীব্য বিমূর্ত। এছাড়া কানাডা যৌথভাবে অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দর্শনশাস্ত্রীয় ‘ফিলোসোফিক্যাল নেক্সলাস অব লুডউয়িগ উইটজেস্টেইন’-এর জন্যও আবেদন করে। অবশ্য মিডিয়ায় এগুলো নিয়ে কোনোই প্রচারণা ঘটেনি।
পাশাপাশি দেশভিত্তিক এককভাবে প্রতিবেশি ভারতের দুটি, যথাক্রমে সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধের ‘মৈত্রীয়ভিয়াকারানা’ দর্শন ও সতেরো শতাব্দীর পা-ুলিপি ‘গিলগিট ম্যানুসক্রিপ্ট’; মিয়ানমারের সোয়েজিগন প্যাগোডায় বার্মিজ, মন ও পালি ভাষায় উৎসর্গীত বাণী ‘কিং বেইনআউং বেল ইন্সক্রিপশন’; যৌথভাবে ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলংকার ২০০৪ সালে সংঘটিত দক্ষিণ এশিয়ার ‘দ্য ইন্ডিয়ান ওশেন সুনামী আর্কাইভস’ এবং সর্বাধিক পাঁচটি দেশ অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, নেদারল্যান্ডস, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যের আবেদনকৃত জাভা অঞ্চলে প্রচলিত রাজকুমারের রূপকথা ‘পাঞ্জি টেলস’ স্থান পেয়েছে। আবার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মাঝে সাত দশকের বিতর্কিত ‘কমফোর্ট ওমেন’ প্রতিকৃতিটি নিয়ে অলাভজনক ‘ইনডিভিজুয়াল জাপান-ইউনাইটেড স্টেটস’ প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টেশন অন ‘কমফোর্ট ওমেন’ অ্যান্ড জাপানিজ আর্মি ডিসিপ্লিন এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর জয়েন্ট নমিনেশন অব দ্য ডকুমেন্টস অন জাপানিজ মিলিটারি ‘কমফোর্ট ওমেন’-এর ‘ভয়েসেজ অব দ্য কমফোর্ট ওমেন’ আবেদনটি পুর্নালোচনার জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
ই-মেইল : নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স