২০ বছর পর ভাঙতে হতে পারে ফ্লাইওভার
আহমেদ রাজু : দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই নগরীতে ফ্লাইওভার নির্মাণ করায় আগামী ২০ বছরের মধ্যেই এগুলো ভেঙে ফেলতে হতে পারে বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত বিশ্বে ৪/৫শ কিংবা হাজার বছরকে সামনে রেখে নগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে যেসব উন্নয়ন কর্মকা- চলছে, তা করা হচ্ছে পাঁচ-দশ বছরের জন্য। ফলে ফ্লাইওভারগুলো একদিন বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, উন্নত বিশ্বে উন্নয়ন কর্মকা- করার আগে প্রাক-স্টাডি ও কৌশলগত পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণের আগে কোনো স্টাডি করা হয়নি। পুঁজিনির্ভরতা ও উন্নয়ন মানসিকতা থেকেই দৃশ্যমান একাজগুলো করা হয়েছে। পরবর্তীতে এসব ফ্লাইওভার বাড়ানোও যাবে না। কারণ, ফ্লাইওভারের শেষ প্রান্তগুলোতে কোনো জায়গা নেই। তাই এগুলো ১৫/২০ বছরের মধ্যেই জঞ্জালে পরিণত হবে।
এসব ফ্লাইওভার দিয়ে নগরীর ৯ থেকে ১০ ভাগ মানুষ চলাচল করে। এত নগণ্য সংখ্যক মানুষের জন্য কেন এত বিশাল বাজেটের ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। এখন নগরীতে পরিবহনের গতি ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার। গতি ৩ কিলোমিটারে নেমে আসবে ২০ বছর পর। তখনই ফ্লাইওভারগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।
নগর বিশেষজ্ঞ তারিকুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণ করায় রাস্তার প্রশ্বস্ততা কমে গেছে। কারণ, পিলারগুলো রাস্তার বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। তাই গাড়ির গতিও কমছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। আগামীতে গাড়ি বাড়লে যানজটও বাড়বে। তাই ফ্লাইওভার নির্মাণ কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
নগর বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, এখন প্রতিদিন নগরীতে নতুন করে গড়ে আড়াই হাজার মানুষ যোগ হচ্ছে। আগামী ২০ বছর পর মানুষ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। জনসংখ্যার সেই চাপ কীভাবে সামলানো হবে, তা নির্ণয় না করেই এসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।
২০ বছর পর গাড়ির সংখ্যাও বাড়বে। বিআরটিএ জানায়, এখন প্রায় ২০ শ্রেণির ১১ লাখ ১৪ হাজার ১৯১টি ২০ পরিবহন আছে। কাগজপত্রে বাস-মিনিবাস আছে ৩৯ হাজার ৬১৪টি। তবে পরিবহন মালিক সমিতির হিসাব মতে নগরীতে ৭ হাজার বাস-মিনিবাস। ২০২৫ সালে বাসের ট্রিপ হবে ৪ কোটি ২৭ লাখ। ২০৩৫ সালে হবে ৫ কোটির বেশি। বাসও তখন বাড়বে কয়েকগুণ। তাই এত বিপুল পরিবহনের চাপ নগরী সামলাতে পারবে না।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী রাজধানীর লোকসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। ২০২৫ সালে নগরীতে বাস করবে ৩ কোটির ওপর। ২০৩৫ থেকে ২০৩৭ সালে নগরীতে বাস করবে অন্তত ৫ কোটি মানুষ। বিপুল জনগোষ্ঠী কীভাবে কীভাবে চলাচল করবে তা নির্ধারণ না করেই তৈরি হচ্ছে ফ্লাইওভার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগরপরিল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রয়োজন গরিব মানুষের বাহন বাস, কমিউটার ট্রেন ও সস্তা পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। তা করতে না পারলে ফ্লাইওভারগুলো একদিন বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি