৭ মার্চের ভাষণ কেন নিপীড়িত মানুষের জন্য
রবিউল আলম
জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় বিশ্বের অন্যতম ভাষণ হিসেবে। ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত, কৃতদাসদের মুক্তির বাণী ছিল ৭ মার্চের ভাষণ। সুদীর্ঘকাল পরে হলেও জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে, বাংলার মানুষ আজ গর্বিত। বিশ্বের পঞ্চম ভাষণের স্থানে টুঙ্গিপাড়ার খোকার ভাষণ, যে ভাষণে ছিল বাঙালির মুক্তি, একটি স্বাধীন দেশে নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, সুবিধাবঞ্চিত, আশ্রয়হীন মানুষের কথা। ৭ মার্চের ভাষণে ছিল বিশ্ব বাঙালির জাগ্রত হওয়ার প্রয়াস, ছিল একটি দেশের উন্নয়নের দিক নির্দেশনা, গোলামি থেকে মুক্ত হওয়ার পথ দেখিয়ে দেওয়া। ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে সুদীর্ঘ ৪৭ বছর গবেষণা হয়েছে, দেশি-বিদেশি অনেক রথি মহারথি গবেষকরা, আমার সেই অভিজ্ঞতা নেই, নেই বিদ্যার জোর। আমি শুধু কিছু পেলে মন ভরে অনুভব করি, জনতার সাথে আনন্দ ভাগ করি। ৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি পাওয়ায় একটু পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ একা নিরবে বসে আছি, স্মৃতির পাতায় ভেসে আসছে একের পর এক অনুভূতি, চোখ যেন ফেরাতে পারছিলাম না। এইতো এখানেই ছিল লক্ষ মানুষের সমাগম, এখান দিয়ে জাতির জনক মঞ্চে এসেছিল, মুন্সিগঞ্জের মহিউদ্দিন ছিল পেছনে। জাতির জনক ধীরে ধীরে সভা মঞ্চে এগিয়ে যাচ্ছেন, গগন বিদারিত চিৎকার, স্লোগান জয় বাংলা, বাংলার জয়। মুহূর্তে স্থবির হয়ে গেল পুরো মাঠ। ভারি কন্ঠে আওয়াজ উঠল, ভাই এরা আমার, শেষ হলো এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তবে যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকবা- বিশ্বের সর্ববৃহৎ কবিতা ছিল ৭ মার্চের ভাষণ। জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও পাকিস্তানিরা বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছে, যাবে- এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমরা বাঙালিরা যেন বিতর্ক সৃষ্টি না করি। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ন্যাশনাল রেজিষ্ট্রারে যুক্ত হওয়ায় আমরা গর্ব অনুভব করতে পারি। নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ৭ মার্চের ভাষণ ছিল অগ্নিঝরা বাণী, বাঙালির যদি স্বাধীন দেশ না থাকত তবে রোহিঙ্গাদের কি হতো? বিশ্বের ৪০ কোটি বাঙালি এখন ভাবতে পারে, বাংলা ভাষার প্রতিনিধিত্ব করার একমাত্র দেশ আছে বাংলাদেশ। এই দেশের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের খোকার ভাষণ বিশ্বের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে। বাঙালি যাকে জাতির জনকের আসনে বসিয়েছিল অনেক আগেই। খোকার নাম লেখতে, এখন লিখতে হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। আজ বিশ্বাবাসী গ্রহণ করেছে জাতিসংঘের স্বীকৃতির মাধ্যমে। কিছু দলের হিংসা থাকবে, থাকবে পাকিস্তানের প্রতিহিংসা। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও খন্দকার আলমগীর হোসাইন