পারিবারিক বন্ধনকে গুরুত্ব দিতে হবে
আমাদের সমাজ একটা অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিছু ভোগবাদী মানুষ সমাজে ঢুকে পড়েছে। পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা থেকে কিছু এলিমেন্ট ঢুকে পড়েছে। আমাদের পারিবারিক বন্ধনগুলো দূর্বল থেকে দূর্বলতর হয়ে পড়েছে। আমরা একধরনের মূল্যবোধহীন সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেখেছি, মা পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করতে পারে সন্তানের জন্য। বাবারা পরকিয়ায় জড়িত হয়েছে। স্ত্রী সন্তানকে ফেলে চলে গেছে। আমরা ভেবেছি পরকিয়াটা আপার ক্লাসে ছিল। এখন দেখছি উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত, ড্রইংরুম থেকে বেডরুম সর্বত্র এটা ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। ভয়াবহ কারণ হচ্ছে, আকাশ সংস্কৃতি সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বিভিন্ন চ্যানেল, ইন্টারনেট যদি সার্চ করেন, দেখবেন এর ভেতরে সুস্থ স্বাভাবিক পারিবারিক কাহিনী নাই। এখানে আছে ব্যাভিচার, পরকিয়া, কুৎসিত কদর্য সংস্কৃতি এবং এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের সমাজ মোহাচ্ছন্ন। আগে ছেলেরা করেছে এখন মেয়েরাও সমান তালে করে যাচ্ছে। প্রতিকারের অবশ্যই ব্যবস্থা আছে। আমাদের বুঝতে হবে পাশ্চাত্যকে আমরা অন্ধের মতো অনুকরণ করতে পারবো না। পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী সমাজ একটি দীর্ঘ সমাজ। তার সাথে সাথে তার সামাজিক অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এবং সেখানে পারিবারিক ভাঙন শুরু হয়েছে। আমাদের সমাজ পুঁজিবাদী সমাজ নয়। আমরা সে অবস্থায় যেতে পারি নাই এখনো পর্যন্ত। কিন্তু আমরা তার ব্যাড এলিমেন্টস গুলোকে গিলতে শুরু করেছি। এখন আকাশ সংস্কৃতির নামে এই কুৎসিত, কর্দয, ব্যভিচারের সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে, এটাকে কন্ট্রোল করতে হবে। অনেকেই বলেন, কিভাবে কন্ট্রোল করবো? পৃথিবীর কোথাও বাংলাদেশের মত ৩০০ টাকা দিয়ে ২০০ চ্যানেল দেখা যায় না । আপনাকে পে-চ্যানেল সিস্টেম করতে হবে। ইউটিউব, ফেসবুক, চ্যাটিং এগুলোতে দেখেন কি অবস্থা। যত ধরনের বিকৃত আচার। ১৮ বছর বয়স হলে এই ভিডিওটি দেখো। দেখুন নানা ও নাতির সম্পর্ক। এই ধরনের জিনিস দিয়ে ভরা ইউটিউব। এর মুলে আপনাকে হাত দিতে হবে। তা না হলে যতই আমরা কথা বলি, এটা হবে না। একটা সাবধানতা আমাদের অবলম্বন করতে হবে যে, পরিবার আমাদের জীবন। সভ্যতা বেঁেচ থাকলে আমরা বেঁেচ থাকি। আমাদের নিজস্ব কিছু পারিবারিক মূল্যবোধ আছে। কিছু সামাজিক মূল্যবোধ আছে। হতেই পারে স্বামী-স্ত্রী দ্বন্দ্ব। সেটার জন্য সন্তান কেন বলির পাঠা হবে? এটা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন আমরা কোনটাকে গ্রহণ করবো, কোনটা বর্জন করবো? কোনটা আমাদের জন্য ভালো, কোনটা মন্দ?এই বিষয়গুলোকে গুলিয়ে ফেলছি। এটা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারছি না। ফলে সমাজে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। সুতরাং এই জায়গা গুলোতে সামাজিক সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। সবাইকে নিয়ে মিলেই করতে হবে। এবং পরিবারকে গুরুত্ব দিতে হবে। পারিবারিক বন্ধনকে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের হাতে তো একটাই অস্ত্র সেটা হচ্ছে, সরকার পানিশমেন্টের ব্যবস্থা করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সকল কিছুর উর্ধ্বে উঠে ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। শুধু পুলিশ দিয়ে কোনো ক্রিমিনাল অফেন্সকে ঠেকাতে পারবেন না। কারণ, বাংলাদেশের সিস্টেমটাকে বুঝতে হবে। আমাদের বাংলাদেশে এই যে অপরাধগুলো ঘটছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলোর সাথে প্রান্তিক জনগনের সম্পৃক্ততা আছে। নিম্নবিত্ত ড্রাইভার , বুয়া ইত্যাদি। একটা সময় মনে হত, এ ধরনের ক্রাইমের সাথে উচ্চবিত্তরাই সম্পৃক্ত। উচ্চবিত্তরা তো সম্পৃক্ত আছেই এতে কোনো সন্দেহ নাই। এর সাথে এখন নিম্নবিত্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জড়িত হয়েছে। এই বুয়া, ড্রাইভার, রিকশা ওয়ালা সবার হাতে মোবাইল ফোন আছে, ইন্টারনেট আছে। তাদের জ্ঞান নাই, তাদের সচেতনতা নাই। যেহেতু সে এখন নেটে আছে। যেহেতু সে এখন অন্য পুরুষের সাথে চ্যাট করছে। সে একটা বদ্ধ সমাজের মহিলা। এদের চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়স হওয়ার আগেই বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে যে কোনো একজনের সাথে। তার নিজস্ব চাওয়া পাওয়ার জায়গাটা সে পূরণ করতে পারে না। আজকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পুরুষের সাথে সে চ্যাট করছে। আনন্দ পাচ্ছে। আদিমতম প্রেষণাগুলোকে সে উসকে দিচ্ছে। কিশোরদের সাথে এই ধরনের সম্পর্ক। এক ধরনের ব্যাভিচারের মধ্য দিয়ে আনন্দ পাচ্ছে। আমরাতো বদ্ধ সমাজের মানুষ। তার কাঠামো পরিবর্তন না করে হঠাৎ করে উন্মুক্ত করে আমরা পাশ্চাত্যের ইক্যুয়েপমেন্ট ঢুকিয়ে দিয়েছি। ফলে আমরা গিলতে পারছি না। আমাদের বদহজম হয়ে যাচ্ছে। সবার হাতে হাতে ইন্টারনেট। ফলে বদ্ধ জগত থেকে হঠাৎ করে আপনি জাম্প করছেন ওপেন এয়ারে। ওপেন সোসাইটি হওয়ার জন্য যে মূল্যবোধ দরকার, কাঠামো দরকার সেটা আপনার নাই। ফলে সমাজে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিচ্ছে। সুতরাং সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এগুলো কোনো সুস্থ সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। পারিবারিক বন্ধনকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এবং এগুলোকে এভয়েড করতে হবে। বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলকে কন্ট্রোল করতে হবে। ইউটিউব, ইন্টারনেট, ফেসবুক, চ্যাট সরকারীভাবে কন্ট্রোল করতে হবে। তা নাহলে শুধু পুলিশ দিয়ে, শুধু ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দিয়ে অপরাধ ঠেকাতে পারবেন না। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
পরিচিতি : সমাজবিজ্ঞানী
মতামত গ্রহণ : সানিম আহমেদ
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ