মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরসা তৈরির নেপথ্যে
সৈয়দ রশিদ আলম
গত দুই বছর থেকে মিয়ানমারের জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় অনলাইন পত্রিকায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপর ও আরাকান প্রদেশের রাখাইনদের উপর অত্যাচারের জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসাকে দায়ী করা হচ্ছে। বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের চলে আসার পিছনে আরসাদের জঙ্গি তৎপরতাকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই আরসা সদস্যরা মিয়ানমারের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে প্রচার মাধ্যম ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থাকার কারণে সঠিক সংবাদ মিয়ানমারবাসী ও বিশ্ববাসী কোনদিনই জানতে পারেননি। মাঝে মাঝে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে মিয়ানমারের সন্ত্রাসীরা ধরা পড়েন। মনে করা হয় এরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। বাস্তব সত্য হচ্ছে মিয়ানমারের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা কতৃক রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা অতিরিক্ত অর্থলোভী তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি করা হচ্ছে। এই আরসার নামে একের পর এক অপরাধ মিয়ানমার সেনাবাহিনী করে যাচ্ছে। দোষ চাপাচ্ছে তাদের তৈরি করা তাদের বেতন ভূক্ত আরসা গোষ্ঠীর উপর। যেভাবে সিআইএ ও মোশাদ আইএস তৈরি করেছে একই ফর্মুলা অবলম্বন করে মিয়ানমার সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আরসা তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাখাইন প্রদেশকে অগ্নিকু-ে পরিণত করা। নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার চালানো ও তাদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করা। এক্ষেত্রে মিয়ানমার সেনা গোয়েন্দা সংস্থা সফল। এদের ছাড়াও মিয়ানমার সেনা গোয়েন্দা সংস্থা মিয়ানমার লিবারেশন আর্মি ও আরাকান লিবারেশন আর্মি নামে দুটি সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরি করেছে। এদের দ্বারাও হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ নিয়মিত করানো হয়। আর দোষ চাপানো হয় অসহায় রোহিঙ্গাদের উপর। বলা হয় রোহিঙ্গা যুবকরাই এইসব সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গারা চলে এসেছেন মানবিক কারণে, বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। এটা আমাদের উদারতা। কিন্তু এই উদারতাকে মিয়ানমার আমাদের দুর্বলতা মনে করছে। আমাদের কৌশলের ভুলের কারণে আমাদের মিত্র দেশ চীন, জাপান, রাশিয়া ও ভারত আমাদের সমর্থন না করে মিয়ানমারকে সমর্থন করছে। আমাদের এই বন্ধু দেশের কথা ও কাজের কোনো মিল নেই। যেটা আমরা বারবার দেখছি। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে যে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা যে কোনো ভাবে রাখাইন প্রদেশকে তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। যে কারণে তাদের তৈরি আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দ্বারা একের পর এক অপকর্ম করিয়ে দোষটি রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ মিত্র দেশগুলো থেকে খুব একটা সন্তোষজনক সাড়া পাচ্ছেন না। কারণ কি? চীন একাই রাখাইন প্রদেশে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সেখানে অবকাঠামো গড়ার সাথে ভারতের উপর নজরদারি চালাতে সক্ষম। সেজন্য তারা চৌকস গোয়েন্দাদের পাঠিয়েছে। অপরদিকে ভারত, মনিপুর ও মিজোরাম এর উপর দিয়ে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওস পর্যন্ত সড়ক পথ তৈরি করবে। এজন্য প্রয়োজন হবে রাখাইন প্রদেশকে অপরদিকে জাপান শত শত কোটি ডলার মিয়ানমারে বিনিয়োগ করেছে। রাশিয়া পুরাতন সমরাস্ত্রগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর কাছে বিক্রি করে থাকে, যেমন-ভারত, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার। মিয়ানমার নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীকে রাশিয়া সমরাস্ত্র দিয়ে গড়ে তুলছে। যে কারণে উল্লেখিত দেশগুলো মিয়ানমারের বিপক্ষে সরাসরি কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পক্ষে মাঝে মাঝে বিবৃতি দিলেও সেটা অনেকটাই লোক দেখানো। যুক্তরাষ্ট্র নিজেও মিয়ানমারের অন্য দেশে মাতব্বরী পছন্দ করছে না। তার লক্ষ হচ্ছে অন্যান্য দেশের মত মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করা ও বাজারজাত করা। যদি এই সুযোগটা মিয়ানমার যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেয়, তাহলে আমাদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো বিবৃতি দেখা যাবে না। অস্ত্র বিক্রেতা দেশগুলোকে বলা হয় এদের কোনো ধর্ম নেই, এদের কোনো বিশ্বাস নেই। যে কারণে বাংলাদেশের উচিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মুসলিম বিশ্বের সহযোগিতা নেওয়া। প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক ফোরামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তৈরি করা আরসাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর স্বরূপটা জানিয়ে দেওয়া। তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা সব সময় মিয়ানমারের চাইতে এগিয়ে থাকব।
লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও খন্দকার আলমগীর হোসাইন