আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে বেড়েই চলেছে খেলাপি ঋণ
তানভীর আহমেদ: খেলাপি ঋণ আর মূলধন ঘাটতিতে আটকে আছে দেশের ব্যাংকিং খাত। আর এই তালিকায় এগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো। এছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় সদ্য অনুমোদন পাওয়া কয়েকটি ব্যাংকও ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। এক সময়ের প্রভাবশালী ইসলামি ব্যাংকও ঋণ খেলাপির তালিকায় চলে এসেছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী মারাত্মক ঝুঁকিতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৬ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ঋণ অবলোপন রয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর সাথে রয়েছে মূলধন ঘাটতি ও প্রভিশন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবেই এমন করুণ পরিনতি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যাদেরকে ঋণ দেয়া হয়েছে তাদের খুঁজে বের করে চাপ প্রয়োগ এবং জামানত হিসেবে যা রেখেছিল সেগুলোতে হাত দিতে হবে। এছাড়া তাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে ভিন্ন ব্যাংকগুলো থেকে সহযোগিতা না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন ধরণের যোগসাজসের মাধ্যমে যেসকল ব্যাংকাররা খেলাপি ঋণে সহযোগিতা করে, তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত শক্ত আইনি এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। আইনের প্রয়োগের দূর্বলতার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং বিভিন্ন ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ সম্পর্কে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তা আমরা জানিও না, দেখছিও না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণের অন্যতম প্রধান কারণ, কোথায় ঋণ দেয়া হচ্ছে তা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় না। যে পরিমাণ সম্পদ বন্ধক রাখা হয় তার চেয়ে বেশি পরিমান অর্থ ঋণ দেয়া হয়। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক সময় ঋণ আদায় করা যায়না এবং বাড়তি ঋণ দিতে হয়। আবার খেলাপি ঋণের কোন পদক্ষেপ নিতে গেলে আইনি জটিলতার কারণে বছরের পর বছর আদালতে আটকে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষকের যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তা আসলে সন্তোষজনক নয়। এমতাবস্থায় খেলাপি ঋণ কমাতে দ্রুত আইন প্রয়োগের প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষকের সমালোচনা করে বলেন, তারা বলে আসছে সবকিছু তদারকি করছে। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক কমিটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাই এখন আইনের দ্রুত প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজনে আলাদা বেঞ্চ গঠন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)’র ডিরেক্টর (ট্রেনিং) প্রফেসর আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশে আইনের প্রয়োগ অনেক দূর্বল। দেশের ঋণ খেলাপিদের বড় অংশই ইচ্ছে করে টাকা দিচ্ছে না। আমাদের সিক ইন্ডাষ্ট্রি আছে কিন্তু সিক ইন্ডাসট্রিয়ালিষ্ট নেই। এজন্য আইনের প্রয়োগ না থাকাই দায়ি। লোন তথা পাবলিক মানি মাফ করে দেওয়ার রাইট কারও নেই। এ ক্ষেত্রে আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। খেলাপিদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ঋণ খেলাপিরা মনেই করেন না যে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। বিপদে না পড়েও তারা কিছু ব্যাংকারদের যোগসাজসে রিসিডিউলিং করে থাকে। ঋণ আদায়ে জন্য বর্তমানে লিগ্যাল প্রেসার জোরদারের সাথে স্যোসাল প্রেসারও জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি