পানামার পর প্যারাডাইস পেপারস বিশ্বের নামিদামিদের কর ফাঁকি উন্মোচন
মরিয়ম চম্পা : পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারীর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাচ্ছেন বিশ্বের নামকরা অসংখ্য ব্যক্তি। এসব ব্যক্তির তালিকায় নাম উঠে আসাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে এই তালিকায়।
জানা গেছে, সারা বিশ্বের অন্তত ১২০ জন রাজনৈতিক নেতার নাম রয়েছে পেরাডাইজ পেপারসে। এক বছর আগে পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল জার্মান দৈনিক জিতডয়েচ সাইতং। প্যারাডাইজ পেপার্স কেলেঙ্কারির ফাঁসের নেপথ্যেও রয়েছে ওই দৈনিক। ২০১৬ সালে ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সের মতো প্যারাডাইসের নথি প্রথমে জার্মান দৈনিকের হাতে আসে। পরে সেসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দিয়েছে তারা।
আইসিআইজে-এর কাছ থেকে কেলেঙ্কারীর তথ্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের অন্তত ১০০টির মতো সংবাদমাধ্যম। এখন চলছে এসব নথির পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ। এর মধ্যে ১ কোটি ৩৪ লাখ নথি এখন তদন্ত করে দেখছেন ৬৭টি দেশের ৩৮০ জন সাংবাদিক। ৫ নভেম্বর আইসিআইজে তাদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণেই দেখা যাচ্ছে, গোটা বিশ্বের অসংখ্য ধনাঢ্য ব্যক্তি কর ফাঁকি দিতে বিদেশে গোপনে সম্পত্তি কিনেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের জামাতার নামও রয়েছে এতে। এছাড়াও রয়েছে ৭১৪ জন ভারতীয়র নাম। তাদের মধ্যে কার্তি চিদম্বরম, নীরা রাডিয়া, বিজয় মাল্যের নাম অন্যতম। অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জয় দত্তের স্ত্রী মান্যতা দত্তের নামও আলোচনায় এসেছে।
তদন্তে ১৮০টি দেশের নাগরিক কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। তবে আইসিআইজে তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, তদন্তের এখন শুরু মাত্র। তাই পুরো তথ্য পাওয়া এখনো সম্ভব নয়। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে তারা। তবে এর মাঝেই চমকে দেওয়ার মতো কিছু তথ্য দিয়েছে বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যম।
ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয় নব্বইয়ের দশকে ট্রাম্পকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করায় উইলবার রসকে বাণিজ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেন ট্রাম্প। বিভিন্ন নথিতে দেখা গেছে, রস এমন এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, যারা রাশিয়ান সংস্থাকে তেল ও গ্যাস শিপিং করে। যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উইলবার রস জড়িত, তার অংশীদার হিসেবে রয়েছেন ভøাদিমির পুতিনের জামাই এবং আরও দুজন ব্যক্তি।
যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যক্তিগত অর্থের প্রায় এক কোটি পাউন্ড অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ হয়েছে। এসব অর্থে কেম্যান আইল্যান্ড ও বারমুডায় রাণীর নামে আলাদা তহবিল সৃষ্টি করা হয়েছে। ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব অর্থ সেখানে গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি রাণীর ব্যক্তিগত সম্পদ ৫০ কোটি পাউন্ডের বিনিয়োগ দেখভাল করে।
এছাড়াও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনে আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন স্টেফান ব্রনফম্যান। গোপন নথিতে দেখা গেছে, ব্রনফম্যান ও তার প্রতিষ্ঠান কেম্যান আইল্যান্ডে প্রায় ছয় কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। যদিও ট্রুডো বারবারই ‘অফশোর’ (কর থেকে বাঁচার জন্য বিদেশে বিনিয়োগ) বিনিয়োগের বিপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে লিওনেল মেসির নাম এসেছিলো। এবারও বাদ পড়েননি তিনি। রুশ প্রতিষ্ঠান ফেসবুক ও টুইটারে বিনিয়োগ করেছে বলেও প্যারাডাইজ পেপারসে বেরিয়ে এসেছে। আর্সেনালের অংশীদারিত্ব থাকা সত্ত্বেও রুশ-উজবেক ধনকুবের আলিশার উসমানোভ এভারটন ফুটবল ক্লাবের শেয়ার কিনে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের নিয়ম ভেঙেছেন বলে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া অ্যাপল, নাইকি, উবারের মতো প্রতিষ্ঠানের নামও আছে তালিকায়। বিবিসি নিউজ, গার্ডিয়ান