দক্ষিণ কেরিয়া সফরে ৫ ইস্যুতে সরব ট্রাম্প
লিহান লিমা : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সিউলে পৌঁছান। বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণের প্রায় পুরোটা সময়ই তিনি ব্যয় করেছেন উত্তর কোরিয়া ও দেশটির নেতা কিম জং উনের সমালোচনা করে। পার্লামেন্টে দেয়া ট্রাম্পের ভাষণের মূল পাঁচটি দিক তুলে ধরেছে মার্কিন টিভি চ্যানেল সিএনএন।
উত্তর ও দক্ষিণের তুলনা : নিজের বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোরীয় যুদ্ধের পর থেকে উত্তরের প্রতিবেশীর বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যাপক উন্নতির প্রশংসা করেন ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পার্থক্য তুলে ধরেন। ট্রাম্প বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া একটি সফল দেশ, কিন্তু এর একটি অন্ধকার দিক হল এটি উত্তরের প্রতিবেশী ও দেশটি কিমের শাসনের কাছাকাছি অবস্থিত। তারপরও দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবেলা করে সফলতা, সার্বভৌমত্ব এবং গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে ও বিশ্ব দরবারে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও দক্ষিণ কোরিয়ার ভবিষ্যতের প্রতি দায়বদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ চায় না : দক্ষিণ কোরিয়ার পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষ চায় না, কিন্তু আমরা পালাতে শিখিনি, আমাদের সঙ্গে সংঘর্ষ করার চেষ্টা করো না। ইতিহাসে দেখা যায়, যারা বোকার মত যুক্তরাষ্ট্রের সামর্থ্য পরিক্ষা করার চেষ্টা করেছে তারাই ধ্বংস হয়েছে। আমরা কখনোই যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের মিত্র দেশগুলোর ওপর কোন হুমকি বা আক্রমণ বরদাশত করব না।
অস্ত্র উত্তর কোরিয়াকে রক্ষা করতে পারবে না : ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার যে অস্ত্রভান্ডার রয়েছে তা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না। আমি উত্তর কোরিয়ার একনায়ককে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, আমাদের অবজ্ঞা করবেন না, আমাদের ধৈর্য পরীক্ষা করবেন না। আপনি যে মারণাস্ত্র অর্জন করছেন তা আপনাকে নিরাপদ করছে না, বরং তা আপনার শাসনকে গভীর বিপদে ফেলছে।’ উত্তর কোরিয়ায় দীর্ঘকাল ধরে চলা ‘সামরিক শাসনের’ সমালোচনা করে দেশটির নেতা কিম জংকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনার দাদার (কিম ইল-সাং, উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা) কল্পনার স্বর্গ নয়, উত্তর কোরিয়া এখন এমন একটি নরক, যেখানে কেউ যেতে চায় না। আপনি পারমাণবিক কর্মসূচী এবং অস্ত্র তৈরি পরিত্যাগ করুন।’
চীনকে পরামর্শ : প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই ট্রাম্প বেইজিংকে উত্তর কোরিয়ার প্রতি কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প বলেন, চীন, রাশিয়াসহ প্রতিটি দেশের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত। চীনের কেন উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত এই সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া মানবাধিকার হরণ করছে। উত্তর কোরিয়ার নারীরা গর্ভপাত করাতে বাধ্য হচ্ছে। কোন কোরিয়ার নারীর গর্ভে যদি চীনা বাবার সন্তান জন্ম নেয় তবে ওই সদ্যজাত শিশুকে হত্যা করা হয়। বলা হয়, ওই সন্তানের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই কারণ সে শুদ্ধ নয়।’
কোরিয়ার গল্ফারদের প্রশংসা: দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে দেয়া ট্রাম্পের ভাষণের একটি অংশ জুড়ে রাজনীতি অনুপস্থিত ছিল। এই সময়টা ট্রাম্প কাটিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার গল্ফ খেলোয়াড়দের প্রশংসা করে। ট্রাম্প বলেন, ‘এই বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হওয়া ইউএস ওপেনের শিরোপা কোরিয় গল্ফারদের হাতে এসেছে। দক্ষ খেলোয়াড় সাং হাইম পার্ক শিরোপা জিতেছেন, সেরা চার কোরিয়দের দখলে ছিল। সেই সঙ্গে প্রথম ৮-১০ জন খেলোয়াড়ের তালিকায় কোরিয় গল্ফাররা অবস্থান করেছেন। স্বাগতম, কোরিয়া, অভিনন্দন।’ সম্পাদনা : পরাগ মাঝি