২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে এখনই শেষ কথাটা ভাবছে না বিএনপি
শাহানুজ্জামান টিটু : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। আগামী নির্বাচন কেমন হবে- এই প্রশ্ন ছিল বিএনপির কয়েকজন নেতার কাছে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা, হতাশা ও প্রত্যাশার কথা বলেছেন তারা। বলেছেন, বর্তমান যে অবস্থা চলছে তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে নির্বাচন কেমন হবে তা সহজেই বোঝা যায়। যদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরির্বতন হয়, তাহলে একটা ভালো নির্বাচন হবে। আর যদি সত্যিকারের একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেন, শুধু আমার নয়, মানুষের অবজারভেশন যেটা, তা হলো আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের চেয়েও আরও ভয়াবহ একটা নির্বাচন হবে। যা ওই নির্বাচনের চেয়েও আরও বেশি বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। প্রতিনিয়ত চলছে মামলা, হামলা, গ্রেফতার। কোথাও তো আন্দোলন নেই, মিছিল নেই, মিটিং নেই- তাহলে মামলা-হামলা, গ্রেফতার হবে কেন? আর মামলা যেগুলো হচ্ছে তার ধারাগুলো হচ্ছে আগুন, বোমাবাজি, সন্ত্রাসের ধারায়।
তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ যেসব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেবে, এরা যাতে নির্বাচনে যেতে না পারে, তারা যাতে এলাকায় না যেতে পারে- এজন্যে তাদের ও কর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এভাবে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উনি (শেখ হাসিনা) একটা নির্বাচন করবেন, সেই নির্বাচনটা কেমন হবে?
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, নির্বাচনের দিনই ফেয়ার থাকতে হবে এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করাটাও ফেয়ার হতে হবে। সরকারি যানবাহনে সরকারি খরচে উনি (শেখ হাসিনা) সারাদেশে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। যেখানে-সেখানে তারা মাইক লাগাতে ও সভা করতে পারে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচন করতে চায়, তারা কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ করতে পারবে না। কর্মীসভা করতে পারবে না। তাহলে নির্বাচনটা কি হবে? সেটাকে কি আদৌ নির্বাচন বলা যায় কিনা।
গয়েশ^র আরও বলেন, উপর থেকে যতই সদিচ্ছার প্রকাশ করুক না কেন, দেখতে হবে আসলে তারা কি চায়। ৩শ এলাকায় ৩শ মহাজন বানিয়ে রেখেছে। এই ৩শ জনই তো তার স্বার্থে এলাকায় অপকর্ম করবে। ফলে জাতি কি চায় আর কি চায় না- এটাতে তো তার যায় আসে না। আর সে অপকর্ম করলেই যে সরকার তাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনবে, সেটাও তো না।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে আমার দুটি বিষয়ে শঙ্কা রয়েছে। এক. নির্বাচনটি প্রভাবমুক্ত হবে কিনা। দুই. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কতটুকু হবে। সবাই চাচ্ছে, সবাই বলছে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন হওয়া খুবই জরুরি। যেখানে গণতন্ত্রের প্রতিফলন ঘটবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আমি আশা করছি আগামী কয়েক মাসে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হবে। এখনো উন্মুক্তভাবে বিরোধী দল কাজ করতে পারছে না। তাদের ওপর হামলা-মামলা চলছে। তারপর দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্বাচনের অযোগ্য করার চেষ্টা চলছে। এবার যদি সত্যিকারের একটা নির্বাচন না হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ সত্যি সত্যি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।
নির্বাচন কেমন হবে এই প্রশ্নের জবাবে দলের অপর ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যারা করেছিল, সেই সরকার এখন ক্ষমতায় আছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি যদি পরির্বতন হয়, তাহলে ভালো একটা নির্বাচন হবে বলে আশা করা যায়। আর তারা যদি আবারো ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে স্বাভাবিক নিয়মে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আকারের একটি নির্বাচন মাঠে চলে আসবে। তবে ক্রমান্বয়ে সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে, এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করছে না। অন্যান্য শক্তিও একটা ভালো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে এখনই শেষ কথাটা বলা কঠিন। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ