শীত বসন্তের ইবাদত
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
বাংলার বুক জুড়ে খেলা করে ঋতুরা। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তে মেতে ওঠে প্রকৃতি। প্রকৃতির পালাবদলে নেচে ওঠে গ্রাম-গঞ্জের সবুজ মাঠ। সবুজ প্রান্তর। গ্রীষ্ম শেষে ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশা কোলে করে আগমন করে শীত। পাতাঝরা গাছে গাছে শুনা যায় পাখিদের সুর। খেজুর-রসের মিষ্টি গন্ধে নেচে ওঠে মন। ঋতুচক্রে শীত, সত্যিই মহান ¯্রষ্টার অপার মহিমা। আল্লাহ তায়ালা বিশ^কে সৃষ্টি করেছেন বৈচিত্র্যময় করে। রাত-দিনের হ্রাস-বৃদ্ধি, ঋতু বৈচিত্র, সৃষ্টি নৈপুণ্যতা সবই তাঁর মহিমা। তিনি বলেন, নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টি এবং দিন ও রাতের বিবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (আলে ইমরান-১৯০) শীত-গ্রীষ্ম আসলে কী? রাসূল সা. বলেন, হযরত আবু হোরায়রা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর বলেছেন, দোজখ তার প্রভুর কাছে অভিযোগ করে এবং বলে, হে মাবুদ! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে দুইটি নিঃশ্বাস ছাড়ার অনুমতি দেন। একটি নিঃশ্বাস ছাড়ার অনুমতি দেন শীতকালে ও অপরটি গ্রীষ্মকালে। তোমরা যে শীতের তীব্রতা ও গ্রীষ্মের প্রচ-তা অনুভব করা তা ঐ নিঃশ্বাসের ফল। (বুখারী-৪৮২) শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। গাছ-পালা সব পত্র-পল্লব শুন্য হয়ে যায়। রাসুলের এক হাদীসে বিষয়টি এসেছে। হযরত আবু যর গিফারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সা. শীতকালের কোন একদিন বের হলেন, যখন গাছের পত্র-পল্লব ঝরে পড়ত। তিনি গাছের দুটি ডাল ধরলেন, ফলে পাতাগুলো ঝড়ে গেল। তখন রাসুল সা. বললেন, যখন কোন মুসলমান বান্দা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশে নামায আদায় করে, তখন তার থেকে পাপরাশি ঝড়ে পড়ে যায় যেমনভাবে এ গাছটির পাতা ঝড়ে পড়েছে। (মুসনাদে আহমাদ-২১০২৩) শীতকালের প্রচ- ঠা-া আমাদের জাহান্নামের শীতলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে কোনো বান্দা যদি শীতকালে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চায়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নামের শীতলতা থেকে মুক্তি দিবেন। রাসূল সা. বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি কোনো বান্দা তীব্র ঠা-ার সময় বলে, লা ইলাহা ইল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই)। আজকে দিনটি কতই না শীতল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জাহান্নামের জামহারীর থেকে মুক্তি দান করুন। তখন আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামকে লক্ষ্য করে বলে, আমার এক বান্দা তোমার জামহারীর থেকে আমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। আমি তোমাকে সাক্ষ্য রেখে বলছি, আমি তাকে মুক্তি দিলাম। সাহাবীগণ বললেন, জামহারীম কি? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জামহারীর হলো এমন একটি ঘর, যেখানে কাফেরদেরকে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে এর ঠা-ার প্রচ-তায় তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে। (বায়হাকী-১/৪৫৯)
শীতকালকে রাসূল সা. মুমিনের জন্য বসন্তকাল বলেছেন। তিনি বলেন, শীতকাল মুমিনের বসন্ত। (মুসানাদে আহমাদ-১১৬৫৬) দিন ছোট হওয়ায় শীতকালে রোযা রাখা খুবই সহজ। রাসুল সা. বলেছেন- শীতকালীন রোযা হলো শীতল (সহজলভ্য) গণীমত।(জামে সগীর-৩৮৬৮) আল্লাহর বান্দাদের জন্য শীতকাল ইবাদতের জন্য খুবই গুরুত্ব রাখে। আল্লাহর রাসুল ছাড়াও বড় বড় সাহাবী শীতকালের ইবাদত সম্পর্কে বলেছেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উমর ফারুক রা. বলেন,
শীতাকাল আবেদ বান্দাদের জন্য গণিমতস্বরূপ। (মুসনাদে আবু নাঈম) বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শীতকালকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শীতকালকে স্বাগতম! এ ঋতুতে বরকত নাযিল হয়। এ সময়ে ইবাদাত বন্দেগীর জন্য রাত্রি দীর্ঘ হয় এবং রোযার জন্য দিন ছোট হয়। (লাতাইফুল মাআরীফ) বিশিষ্ট তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. বলেন, মুমিনের জন্য উত্তম কাল হলো শীতকাল। সে এর দীর্ঘ রাতে ইবাদাত বন্দেগী করে এবং ছোট দিনে রোযা রাখে। (মুসনাদে হাসান বসরী) হযরত উবায়েদ বিন উমাইর রহ. শীতকালের আগমনে বলেন, হে কুরআনের অনুসারীগণ। কুরআন পড়ার জন্য তোমাদের রাত দীর্ঘ হয়েছে। অতএব তোমরা কুরআন পাঠ কর। রোযার জন্য দিন ছোট হয়েছে। অতএব তোমরা রোযা রাখ। বিশিষ্ট সাহাবী মাআয বিন জাবাল রা. ইন্তেকালের সময় কাঁদছিলেন। তাঁকে ক্রন্দনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন- আমি (রোজার কারণে) গ্রীষ্মকালের দুপুর বেলার তৃষ্ণা, শীতের রাত্রিতে ইবাদাত-বন্দেগী এবং ইলমের মজলিসগুলো হাজির হয়ে আলেমদের সোহবাত হারানোর জন্য কাদঁছি। শীত আল্লাহর অপার মহিমায় আবৃত। ইবাদতের জন্য আল্লাহ বান্দাদের উপহার দিয়েছেন দীর্ঘ রাত। রোজা রাখার জন্য দিনকে করে দিয়েছেন ছোট। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য শীতার্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ও ইবাদতে শরীক হতে পারি। ইবাদতের মাধ্যমে ও ¯্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে পারি।