রপ্তানিমুখী শিল্পখাত ধ্বংসের মুখে
অধ্যাপক ড. সামছুল আলম
গাজীপুরের সফিপুর কোনাবাড়িসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে শিল্পকারখানায় পুনরায় যে ভয়াবহ গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে এটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। গ্যাসের অভাবে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা বন্ধ থাকাটা জাতীয় অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি। সরবরাহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংযোগ না দেওয়ার কারণেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু কোম্পানি আছে যারা চাহিদার তুলনায় দু-তিন গুণ বেশি গ্যাস নিচ্ছে।
সেই গ্যাস সিএনজি করে কালো বাজারে বিক্রি করছে। আবার অনেক কোম্পানি চাহিদার তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছে। সরকার নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছে। বেসরকারি খাতে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে ঠিকই কিন্তু সরকার পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আবার এই সমস্যা সমাধান হয়ে যে দ্রুত গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে তেমন কোনো সম্ভাবনাও নেই। গ্যাস সংযোগের সাথে সরকারের উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতির সম্পর্ক আছে। সেখানে কোনো নিতিমালা মানা হয়নি। নতুন গ্যাসের সন্ধানেও পেট্রোবাংলার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যার ফলে এখন উৎপাদন শিল্প ধ্বংসের মুখে।
প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের অর্থনীতিতে। নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবে এবং বাজার ছেড়ে অনেকে চলে যাবে। কেননা পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অভাবে উৎপাদন থমকে গেলে শিপমেন্ট বাতিল হয়। ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এত বড় লোকসান করে এই বাজারে কারো পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব না। ভিন্ন পদ্ধতিতে ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন করলে উৎপাদন ব্যয় বেশি হয়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে উৎপাদন ব্যয় বেশি হলে আমাদের শিল্প ভয়ঙ্কর প্রতিয়োগিতার মধ্যে পড়বে। বিনিয়োগ পিছিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়ছে। বিনিয়োগ যদি রাশ পায় তাহলে কর্মসংস্থানও রাশ পায়।
এমনিতেই বেকারত্ব বাড়ছে। সরকারি খাতে বেতন বৃদ্ধি হলেও বেসরকারি খাতে বেতন বৃদ্ধি হয়নি। অনেক যায়গায় ছাঁটাই হয়েছে। সরকারি কর্মচারী ২০ লক্ষ, সেখানে বেসরকারি কর্মচারী ৭ কোটির বেশি। শিল্পখাতেই কর্মসংস্থান বাড়ে আর সেই খাত যদি হুমকির মুখে পড়ে তাহলে আমাদের গোটা অর্থনীতি খাদের কিনারায় থাকবে।
পরিচিতি : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
মতামত গ্রহণ : লিয়ন মীর
সম্পদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ