৬ বছরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৫০ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি
বিশ্বজিৎ দত্ত : ২০১০ থেকে ’১৭ মাত্র ৭ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫০টিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটের তথ্যানুযায়ী এটি উভয় দেশেরই যে কোনো দেশের সঙ্গে করা সবচেয়ে বেশি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে জানুয়ারি ২০১০-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে ভারত বাংলাদেশের জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাইন অফ ক্রেডিট ঘোষণা করে। প্রথম এলওসি’র আওতার প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৫-এর জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন আরেকটি এলওসি ঘোষণা দেন। নতুন এলওসি সড়ক, রেলওয়ে, বিদ্যুৎ, নৌ, এসইজেড, স্বাস্থ্য ও মেডিকেল সেবা এবং কারিগরি শিক্ষা ক্ষেত্রের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করবে। এটিও যে কোনো দেশকে দেওয়া ভারতের সবচেয়ে বেশি ঋণ। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্যও যে কোনো দেশের কাজ থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় ঋণ।
২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বর্তমানে দুটি আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ স্থানান্তর হচ্ছে। সম্প্রতি বহরমপুর-ভেড়ামারা আন্তঃসংযোগ দিয়ে ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ স্থানান্তরিত হয় সুরজমনিনগর (আগরতলা)-কুমিল্লা আন্তঃসংযোগ দিয়ে। বহরমপুর-ভেড়ামারা আন্তঃসংযোগ দিয়ে অতিরিক্ত আরও ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রদানে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। ২০১৬ সালের মার্চে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানি এবং ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লায় বিদ্যুৎ রপ্তানির উদ্বোধন করেন। রামপালে ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি) এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)-এর ৫০:৫০ যৌথ উদ্যোগে একটি ১,৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক মৈত্রী থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের কাজ চলছে। ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশন, নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড, গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড, পেট্রোনেট এলএনজি লিমিটেড-এর মতো সরকারি ইউনিটগুলোও তাদের বাংলাদেশি তেল ও গ্যাস খাতের অনুরূপ ইউনিটগুলোর সাথে কাজ করছে। অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের সাথে ৫০-৫০ সহযোগিতায় ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড এসএস-০৪ এবং এসএস-০৯ নামে বাংলাদেশে দুটি অগভীর জলের ব্লক পরিচালনা করছে।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে সীমান্ত দিয়ে সড়কপথে পণ্য পরিবহন পরিচালিত হয় ২০টি ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনস (এলসিএস) দিয়ে এবং আরও ২০টিরও বেশি চালুর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দুদেশের মধ্যে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ সপ্তাহে ৩ দিন চলাচল করে। ৬টি রেল সংযোগের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে ৩টি আন্তঃদেশিয় ব্রডগেজ রেলসংযোগ চালু আছে। তাছাড়া কলকাতা-ঢাকা, শিলং-ঢাকা এবং ঢাকা হয়ে আগরতলা-কলকাতা নিয়মিত বাস সেবা চালু রয়েছে। আগস্ট ২০১৬ খুলনা-কলকাতা বাস সেবার পরীক্ষামূলক যাত্রা সফল হয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে নিউ দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নিয়মিত বিমান সংযোগও রয়েছে। নতুন করে খুলনা ও কলকাতা রেল যোগাযোগ চালু হয়েছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন)-এর মধ্যে মটর ভ্যাহিকেল এগ্রিমেন্ট (এমভিএ) সড়ক যোগাযোগকে জোরদার করবে। এর বাইরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, শিক্ষক ইত্যাদি কর্মকর্তাদের জন্যও বিশেষ কতগুলো কোর্স চালু রয়েছে।
এর বাইরে পানি সম্পদ; প্রাকৃতিক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ; বৈজ্ঞানিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি; জনগণে-জনগণে বিনিময়; পরিবেশের সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা; উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং নিরাপত্তাবিষয়ক সহযোগিতা বৃদ্ধির দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ