বাল্য বিয়ে নারীর জীবন ধ্বংস করে
মো. জাহের মিয়া ফকির
বাল্য বিয়ের জাঁতাফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অনেক কিশোরীর শিক্ষা জীবন। আমাদের দেশে কন্যাশিশু জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে। কন্যা শিশু হয়েছে শুনলেই অনেকের মন খারাপ হয়ে যায়। অনেক যুগ আগের তুলনায় এখন হয়তো এমন খারাপের সংখ্যা কম, তবুও উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বিভিন্ন উদ্যোগের পরও বিদ্যালয় থেকে কন্যাশিশু ঝরে পড়া বন্ধ করতে পারছি না আমরা। কন্যাশিশুকে শিক্ষিত করার ব্যাপারে অভিভাবকদের ভেতর তেমন সচেতনতা লক্ষ্য করা যায় না। মেয়ের নিরাপত্তাহীনতার কথা চিন্তা করে তাদের বাল্য বিয়ে দিতে অভিভাবকরা বেশি আগ্রহবোধ করে। পরে অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তাদের ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়। কোনো কোনো সময় গর্ভবতী অবস্থায় বা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অনেক মায়ের মৃত্যু হয়। বাবা মায়ের অজ্ঞতার কারণে বিপদের মুখে পড়ে ধ্বংসের পথে পরিচালিত হয়। বর্তমান সমাজে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে অনেক মেয়েরা আত্মহননের পথ বেঁছে নিয়েছে। বর্তমান সময়ে নারী ও শিশু ধর্ষণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। আমার খুব ইচ্ছে করে ৩ বছরের একটি শিশুকেও কেন ধর্ষণের শিকার হয়ে হয়? এ শিশুর তো পোশাকের কোনো সমস্যা ছিল না, দেহভঙ্গি আর স্বাধীনচেতা মনোভাবের প্রশ্নই উঠে না। তবে কেন তাকে এ নির্মম নৃশংসতার শিকার হতে হলো? আসলে লজ্জা তো একজন ধর্ষিতার নয়, লজ্জা হওয়া উচিত ধর্ষকের। কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষের চোখটা বড্ড খারাপ। ধর্ষণের মতো এমন জঘণ্য ঘটনা ঘটিয়ে একজন ধর্ষক রাস্তা দিয়ে বুক ফুলিয়ে হেঁটে যায় কাদের ছত্রছায়ায়? এভাবেই পরোক্ষ মদদে বেড়ে উঠেছে অন্যায়ের বা হাত। ঘরে বাইরে সর্বক্ষেত্রেই নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে নারীদের। আমাদের দেশে অনেক দিক থেকে এগিয়ে গেলেও এখনো অনেক দিক থেকেই পিছিয়ে আছে। দেশ উন্নত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সে অনুপাতে দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে না। জলের কল খুললেই জল পাচ্ছে, সুইচ চাপলেই আলো জ্বলছে কিন্তু এ আধুনিক যুগে এসেও বউ পেটানোর সেই প্রাচীন অভ্যাসটা মানুষ ছাড়তে পারছে না। স্বাধীনতার এত বছর পরও এমন বিশ্রী মানসিকতার পরিবর্তন এলো না। সরকারি হিসেবে দেশের ৬৪ শতাংশ শিশুর বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে বাল্য বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করার অঙ্গীকার করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা বছরজুড়ে চলতে থাকে। পরে অবশ্য ১৯২৯ সাল থেকে বহাল থাকা আইনি বয়সসীমা ২১ ও ১৮ থাকে কাগজে কলমে বিয়ের বৈধ বয়স। এ ব্যাপারে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বাল্য বিয়ে রোধে কোনো সফলতা সরকার পাচ্ছে না। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে এসব বিয়ের খবর প্রশাসন পাচ্ছে না। এখন সময় আমাদের কিশোর কিশোরীদের সামনে এগিয়ে চলার। নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ করে তোলার। এ দায়িত্ব আমাদের সবার।
লেখক : কলামিস্ট/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ