প্ররোচিত গর্ভপাতে নিরবে বন্ধ্যা হচ্ছেন নারীরা
ডা. জাকির হোসেন
স্্রষ্টার অসীম কৃপায় নারীর জরায়ুতে আসে স্বর্গীয় ফুল। মানুষ সচেতন কিংবা অবচেতন মনে ¯্রষ্টার এই দানকে ধ্বংস করে। গর্ভপাত হলো কোনো ফিটাস বা ভ্রুণ নিজে নিজে বেঁচে থাকতে সক্ষম হওয়ার আগেই এটিকে অপসারণ করে অথবা মাতৃগর্ভ থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে গর্ভধারণের অবসান ঘটানো। জরায়ু থেকে অপরিণত এই ভ্রুণ বেরিয়ে আসাকে গর্ভপাত বলা হয়। কখনো কখনো কোনো আঘাত বা কারণ ছাড়াই জরায়ু থেকে ভ্রুণ বেরিয়ে আসতে পারে কিংবা ফিটাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই সকল ক্ষেত্রে গর্ভপাতের জন্য চিকিৎসার বা অস্ত্রপচারের প্রযোজন পড়ে। এই ধরনের গর্ভপাতকে স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত বলে। গর্ভ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন উপায়ে গর্ভপাত ঘটানো হয়ে থাকে। এই ধরনের গর্ভপাতকে প্ররোচিত কিংবা কৃত্রিম গর্ভপাত বলে। এই ধরনের গর্ভপাত সাধারণত গর্ভধারণকাল বা ভ্রুণের বয়স বা আকারের উপর নির্ভর করে। কৃত্রিম গর্ভপাতের জন্য যেমন কিছু মেডিসেনের ব্যবহার আছে তেমনি আছে শল্য চিকিৎসারও প্রয়োগ। তবে যে পদ্ধতিই অবলম্বন করা হোক এক্ষেত্রে জটিলতা অনেক বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে কৃত্রিম গর্ভপাতের সংখ্যা দিনে দিনে ভয়াবহ পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে সঠিক পরিসংখ্যান নেই বলে এর প্রকৃত সংখ্যা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। তাছাড়া সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণœ হওয়ার ভয়ে প্রায় বেশির ভাগ গর্ভপাত হয় পরিবারের অগোচরে। একটু ভাল করে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় আজ কাল রাস্তা-ঘাটের ড্রেনের পানিতে কিংবা ময়লার ডাস্টবিনে অপরিণত মানব ভ্রুণের সন্ধান পাওযা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও এই হতভাগা ভ্রুণ আবার কুকুরের আর পোকা মাকড়ের খাবারে পরিণত হচ্ছে। এই সকল মানব ভ্রুণ বেশির ভাগই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ফসল কিংবা সঠিক উপায়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ না করার ফলে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণের ফসল। চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বেশির ভাগ সাধারণ জনগণ কিংবা নারী সমাজ এম আর কে একটা সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে মনে করছে। তাছাড়া বেশির ভাগ নারীই এমন সময় এই পদ্ধতিটির শরণাপন্ন হন যখন তারা একটা গর্ভধারন করে সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকেন। পরিবার সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার অভাবে তারা এটাকে আপদ ভাবতে শুরু করেন। সেই সময়ে তাদের একমাত্র চিন্তা থাকে কিভাবে এই ভ্রুণ বিনষ্ট করা যায়। তারা তখন চিকিৎসা পদ্ধটির ঝুঁকি সমূহ একেবারেই ভুলে যান কিংবা সমস্ত ঝুঁকি নিয়েই এই পদ্ধতির মুখোমুখি হওয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না। প্ররোচিত গর্ভপাতের নানাবিধ ঝুঁকি রয়েছে যেমন ভ্রুণের অংশ বিশেষ ভিতরে থেকে যাওয়া, অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ ,জরায়ু ছিদ্র হয়ে যাওয়া ,জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া। দীর্ঘ মেয়াদী নানাবিধ ঝুঁকি রয়েছে এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আজীবনের জন্য নারীর বন্ধ্যা হয়ে যাওয়া। বাংলাদেশে এখন ইনফার্টিলিটি নিয়ে ব্যপক আকারে না হলে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু নারীর ইনফার্টিলিটির অন্যতম কারণগুলো একটি হলো এই কৃত্রিম গর্ভপাত। যদি অনিরাপদ গর্ভপাতের হার কমে আসে তবে বহুলাংশে হ্রাস পাবে নারীর ইনফার্টিলিটির হার।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট