বৃহত্তম নাগালিম গঠন নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে অস্থিরতার আশঙ্কা
মাছুম বিল্লাহ : ভারতের নাগা অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে বৃহত্তম নাগালিম গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেভেন সিস্টার্স খ্যাত ভারতের এই অঞ্চলটিতে এমনিতেই স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র লড়াই করছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। এর মধ্যে বৃহত্তম নাগালিম গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ আসাম, মনিপুর ও অরুণাচলের সাধারণ মানুষ। এ প্রেক্ষিতে এ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো আরও সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলের বিভিন্ন জাতি-উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এ অঞ্চলের সংখ্যালঘু মুসলিমরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নাগাল্যান্ডের আলোচনাপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ডের আইজাক-মুইভা (এনএসসিএন-আইএম) শান্তি আলোচনা চলছে। ওই আলোচনাতে এনএসসিএন-আইএমের প্রধান দাবিই হলো- আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং মণিপুরের নাগা-অধ্যুষিত এলাকাগুলো নিয়ে বৃহত্তম নাগালিম গঠন। যে প্রক্রিয়াটি এখন অনেকটা এগিয়েছে। আর এটা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে বিরোধ। যা নিয়ে এই ৩টি রাজ্যে অব্যাহত রয়েছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংসহ অন্যদের জানিয়ে এসেছেন, নাগালিম গঠনে আসামের জায়গা ছাড়া হবে না। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন্দ্র সিং পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারকে সাফ দিয়েছেন, মণিপুরের অখ-তা ধরে রাখতে কোনো জায়গা ছাড় দেওয়া হবে না। অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুও জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের স্বার্থ বিকিয়ে নাগালিম প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে তার রাজ্য। এসব রাজ্যের বিরোধী দলগুলো নাগালিম গঠনের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদী (এনএসসিএন-আইএম) গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারত সরকারের প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তির মধ্যে আশঙ্কার কালো মেঘ দেখছেন এই অঞ্চলের মুসলিমরা। তাদের আশঙ্কা, নাগা জঙ্গিদের দাবি মেনে ভারত সরকার নাগালিম বা বৃহত্তর নাগাল্যান্ডের দাবি মেনে নিতে পারেন। এতে মণিপুরের একটি বড় অংশ চলে যাবে তাদের হাতে। এতে নতুন করে এ রাজ্যের মুসলমানরা সমস্যায় পড়তে পারেন। মুসলিমদের অস্তিত্ব সংকট সৃষ্টি হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে মণিপুরের মুসলিমদের সংগঠন এমএমডব্লিউও নাগালিম গঠনের বিরোধিতা করছে। ২০০১-এর আদমশুমারি অনুযায়ী, মণিপুরে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৯ জন মুসলিম ছিলেন। জনসংখ্যার শতকরা হার ছিল ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। কিন্তু ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ অঞ্চলের অ-নাগা সাধারণ মানুষের মধ্যেও নাগালিম নিয়ে আপত্তি রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, নাগাদের জন্য আলাদা রাজ্য হলে অন্য সম্প্রদায়গুলোও তো একই দাবি করবে। এ অবস্থায় নতুন করে অশান্তির আশঙ্কায় সবাই এখন তাকিয়ে আছেন দিল্লির দিকে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ