রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনার শেষ কোথায়?
রবিউল আলম : মানুষের, সমাজের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য রাজায় রাজায় মত বিনিময় হতো। মানুষের শূণ্যতা পুরণে দাস-দাসী, কৃতদাস কত না যাতনা, কত না ছলনা করা হতো। দেশ আছে মানুষ নেই, উন্নয়নের জন্য এক দেশ থেকে আরেক দেশ কতই না লোভনীয় অফার দিয়ে মানুষ ভাগিয়ে, হায়ার করে কৃতদাস করে, ডাকাতের ছদ্মবেশে, সওদাগরি প্রথায় মানুষ ছিনতাই করা হতো। বিশ্বের সর্বশক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের কথাই যদি আলোচনা করা হয়, তবে রেড ইন্ডিয়ানদের মালিকানা ছিল। বিভিন্ন দেশের বানিয়ানরা আজ যুক্তরাষ্ট্রের শাসক। রেড ইন্ডিয়ানরা আজ পরগাছা। আদিযুগের প্রথা এখনো চলছে। ২৯ অক্টোবর দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম, ইতালির শহর ক্যান্ডেলায় মানুষ শূণ্যতা দেখা দিচ্ছে, জনবসতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা ধরনের অফার দেওয়া হচ্ছে, অর্থ-জমি ও বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে। নিকোলা গাট্টা শহরটিকে ১৯৯০ শতকের মতোই করতে চান ইটালিয়ানরা। এই আধুনিক যুগেও মানুষের অভাব মনে করিয়ে দিল আদিযুগকে। মনে করিয়ে দিল রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করার জন্য আরাকানে বসতি গড়ার জন্য আরাকান রাজা শত প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ হরণ করেছিল, অর্থ ও জমিসহ অনেক কিছুই দেওয়া হয়েছিল, আরাকানসহ মিয়ানমারকে (বার্মা) মানব সভ্যতা ও বসবাসের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। এই প্রথা অবলম্বন করেছেন তৎকালীন ভারতের আসাম রাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশে। আজ শত শত বছর পরে যদি প্রশ্ন উঠে, মিয়ানমার যে প্রশ্নে সারা বিশ্বের কাছে রোহিঙ্গা নিয়ে সামনে এসেছে, রোহিঙ্গারা বাঙালি, তবে প্রশ্ন উঠতে পারে এমেরিকান কারা, কারা ইটালিয়ান, বৃটিশ, প্যালেস্টাইন, ইসরাইলী- তবে লক্ষ কোটি উদ্বাস্তু কোথায় গেল? সারা বিশ্ব যদি মিয়ানমার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন, মানুষের আদি নিবাস কোথায়- তবে মিয়ানমার মগদের ইতিহাস খুঁজতে হবে। যেখানে পাওয়া যাবে মগ নামের অর্থ। ভালোভাবে খুঁজলে পাওয়া যাবে নৌ-ডাকাত। আরও পেছনে গেলে দেখা যাবে ওরা কাপড় পড়তেও জানতো না। অসভ্য-বর্বর ছিল। আমাদের কাছে কাপড় পড়া শিখেছে। সে যাই হোক, বাঙালি প্রতিদান চায় না। আমার প্রশ্ন হলো, শত বছর আগে কে কোথা থেকে এসেছিল খোঁজা যদি শুরু হয় তবে বিশ্বের কি হবে? অনেক আগেই ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের জন্য (বর্তমান ভাষানচর) দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকায় লিখেছিলাম। সরকার তা বিবেচনায় নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভাষানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে করণীয় সম্পর্কে কিছু অনুরোধ করছি। ১৫-১৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঠেঙ্গারচর (ভাষানচর) রোহিঙ্গা বসবাস ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে। সারা জীবন রোহিঙ্গাদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো যাবে না, ভাষানচরে মানুষের বাসস্থান সৃষ্টি করতে হবে, ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর নলকুপের মাধ্যমে খাওয়ার পানি, স্কুল-কলেজ, স্বাস্থ্য সেবার সুব্যবস্থা করতে হবে। ভাষানচরে সবচেয়ে বড় পেশা হবে পশুপালন। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের গরু মাংসের ও পশুর বর্জ্যরে চাহিদা অপূরণীয়। বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করতে হয় ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের গরু দিয়ে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি ভাষানচরে পশুপালন উন্নয়ন করা হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে রোহিঙ্গারা। ভাষানচরে ফিসারী, মিল্ক, মিট, কৃষ্টি কাজের যথাযথ ব্যবস্থা করতে পারলে ভাষানচর হবে অর্থনৈতিক জোন। রোহিঙ্গারা হবে বাংলাদেশের আশির্বাদ। মিয়ানমারে আগেও মগ ছিল, এখনো মগ থাকবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে বিশ্ব অবাক হয়েছে। মিয়ানমার অবাক হবে, আফসোস করবে এক সময় রোহিঙ্গা নিয়ে। কিছু বিতর্ক আছে, থাকবে- রোহিঙ্গারা প্রতিহিংসা পরায়ন ও হিং¯্র ও বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য নয়। মিয়ানমারে ছিল না শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, মানুষ হওয়ার মতো আচরণ, বন জঙ্গলের মাঝে অবস্থান করে কি মানবিক গুনাবলীর অধিকারী হতে পারে? আমাদের দেশেওতো কিছু অমানুষ আছে গাড়ির সাথে মানুষ জ্বালিয়েছিল, আমরা কিন্তু তাদেরকে দেশছাড়া করিনি। শেখ হাসিনার দর্শন হচ্ছে অপরাধী নয়, অপরাধ নির্মূল করতে হবে। আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মানব সেবার মাধ্যমে সমাজ, দেশের পরিবর্তন করতে হবে এবং সেটা করাও যায় এই কারনে যে একটি স্লোগান আজও বিখ্যাত এবং মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়- ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’। স্লোগানটি আমিও বিশ্বাস করি। প্রমাণ করব রোহিঙ্গা পূনর্বাসনের মাধ্যমে।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : আশিক রহমান