পাকিস্তানমুখি তিনটি নদীর প্রবাহ আটকে দিয়েছে ভারত
আরটিএনএন : ভারতের বিরুদ্ধে এবার পানিসন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানে। দেশটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিনটি নদীর পানি আটকে দিয়ে ভারত এই সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে স্থানীয় পত্রপত্রিকা অভিযোগ করেছে। নদী তিনটি হলো- সুতলেজ, বিয়াস ও রবি। এছাড়া চেনাব নদীর পাওনা ৫০,০০০ কিউসেক পানিও ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে বলে খবরে জানা গেছে।
ভারত নদীগুলোর গতিপথ আটকে দেয়ায় সেগুলোর ৯০টি খালের একটিতেও পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো যখন প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধ্বংস করার কাজে ব্যস্ত সেই সুযোগে ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) লঙ্ঘন করে নদীগুলোর প্রবাহ আটকে দেয় বলে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানকে চেনাব নদীর ৫০,০০০ কিউসেক পানি দেয়ার কথা ভারতের। বর্তমানে এই নদীতে মাত্র ৫৪৬১ কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে।
সুতলেজ, বিয়াস ও রবি নদীতে ভারত বহুসংখ্যক বাঁধ নির্মাণ করেছে। ফলে এসব নদী থেকে বহু জলজপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অন্যদিকে চেনাব নদীতে মাত্র ৪১৮২ কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে। অথচ নদীর স্বাভাবিক গতি বজায় রাখার জন্য অন্তত ১৮০০০ কিউসেক পানি প্রয়োজন। ভারত পানি বন্ধ করে দেয়ায় পাকিস্তানে কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে বলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন। কৃষকরা সেচের কাজে এখন টিউবওয়েল ব্যবহার করছে।
সিন্ধু পানি চুক্তি অনুযায়ী, তিনটি নদী: জিলম, চেনাব ও সিন্ধু’র পানিতে পাকিস্তান অবাধ প্রবেশের সুযোগ পাবে। অন্যদিকে, পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদী সুতলেজ, বিয়াজ ও বিয়াস-এ ভারতকে অবাধ প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
তবে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন উপলক্ষে সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছেন।
সিন্ধু নদের পানিবণ্টন নিয়ে নিরপেক্ষ থাকার আশ্বাস বিশ্বব্যাংক। সিন্ধু নদ পানিচুক্তির আওতায় ভারতের দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে আলোচনার সময় নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তাছাড়া পাকিস্তান ও ভারত যাতে সমস্যাটির নিরসনে ‘শান্তিপূর্ণ কোনো উপায়’ খুঁজে পেতে পারে, সেজন্য সহায়তাও করে যাবে।
ওয়াশিংটনে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হওয়া এই আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেতে ডিক্সন বলেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের আয়োজনে অনুষ্ঠেয় সভায় উভয় পক্ষ অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করায় আমরা খুশি হয়েছি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নবতেজ সরনাকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, বিশ্বব্যাংক শুভেচ্ছা ও সহযোগিতার চেতনাকে স্বাগত জানায়। খবর পিটিআই।
২৫ জুলাই লেখা এক চিঠিতে ভারতীয় দূতকে আশ্বস্ত করে বিশ্বব্যাংক জানায়, তারা নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করার জন্য পক্ষগুলোকে সহায়তা করে যাবে। এতে বলা হয়, আমরা আশা করছি, সব পক্ষ চুক্তিটি রক্ষা করার একটি উপায় বের করার প্রস্তুতি নিয়েই আলোচনার টেবিলে আসবে। ভারতের পানিসম্পদ সচিব অমরজিৎ সিং আলোচনায় ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেবেন। ভারতীয় প্রতিনিধি দলে দেশটির পররাষ্ট্র ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও থাকবেন।
দুই দেশ গত মার্চে প্রকল্প দুটি নিয়ে শেষবারের মতো আলোচনা করেছিল। বৈঠকটি হয়েছিল পাকিস্তানে, স্থায়ী সিন্ধু কমিশনের আওতায়।
জম্মু ও কাশ্মীরে দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তান বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের কাছে উত্থাপন করেছিল।
পাকিস্তান মধ্যস্ততাকারী আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল। উল্লেখ্য, ৫৭ বছর আগে দুই দেশের মধ্যকার পানিচুক্তিটিতে বিশ্বব্যাংকও একটি পক্ষ। অন্যদিকে বিষয়টি তদারকি করার জন্য নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুরোধ করেছিল ভারত। ভারতের মতে, পাকিস্তান যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তা ‘কারিগরি’ বিষয়ক। দুই পক্ষের কাছ থেকে অনুরোধ পেয়ে বিশ্বব্যাংক দুই ধরনের উদ্যোগই গ্রহণ করে। তারা নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের পাশাপাশি সালিসি আদালতও প্রতিষ্ঠা করে। তবে ভারতের আপত্তিতে যুগপৎ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সমাধান খোঁজার জন্য ভারত ও পাকিস্তানের সাথে প্রতিনিধিদের সাথে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠকে বসে বিশ্বব্যাংক। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ