ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিশেষ দিনগুলো পালন হবে না মূল তারিখে অবশেষে পরিবর্তন হলো না বাংলা বর্ষপঞ্জির
বিশ্বজিৎ দত্ত : এ বছরও পরিবর্তন হচ্ছে না বাংলা বর্ষপঞ্জি। ফলে বাঙালি সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত দিনগুলো এবারেও আর ফেরত আসছে না মূল বাংলা তারিখে। বর্ষপঞ্জি সংস্কার না হওয়ায় বাঙালির প্রধান উৎসব পয়লা বৈশাখ খ-িতভাবেই উদযাপিত হবে।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান জানিয়েছেন, ২০১৭ সাল থেকেই পরিবর্তিত বর্ষপঞ্জি চালুর কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না। তবে আগামী ২০১৮ সালে আমরা বর্ষপঞ্জি পরিবর্তনের কাজ করতে পারব। তিনি জানান, বর্ষপঞ্জি পরিবর্তনের একজন সদস্য ড. অজয় রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার অনুপস্থিতির কারণে কাজটি অগ্রসর হয়নি। আশা করছি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, বাংলা বর্ষপঞ্জিতে একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের মূল বাংলা তারিখে ফিরে যেতে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে এই পরিবর্তনের কাজ করেছে বাংলা একাডেমির পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি। জাতীয় দিবসগুলোর ইংরেজি তারিখ ঠিক রেখে মূল বাংলা তারিখ সংযোজন করা হবে। এর ফলে বাংলা বিভিন্ন মাসের দিনের সংখ্যায়ও পরিবর্তন আসবে।
ড. শামসুজ্জামান খান জানান, ইংরেজি সালের বঙ্গাব্দের দিন-তারিখের হিসাবের সমস্যা দূর করার জন্য ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি বঙ্গাব্দ সংস্কার কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি চার বছর পরপর চৈত্র মাস ৩০ দিনের পরিবর্তে ৩১ দিনে গণনা করার পরামর্শ দেয়। ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ বাংলা বর্ষপঞ্জির পরিবর্তন আনা হয়। সে সময়ের বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসাকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে পরিবর্তন আনা হয়। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম ৫ মাস অর্থাৎ বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস ৩১ দিন করে এবং বাকি সাত মাস অর্থাৎ আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস ৩০ দিনে গণনা শুরু হয়। গ্রেগরীয় বা ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অধিবর্ষে (লিপইয়ার) যে বাংলা মাসের ফাল্গুন মাসে পড়বে, সেটি ৩১ দিনে গণনা করা হচ্ছে। ওই বছর থেকে গত ২২ বছর ধরে বাংলা একাডেমির প্রণীত বাংলা বর্ষপঞ্জি চলমান।
পরিবর্তিত ওই বাংলা বর্ষপঞ্জিতে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো মূল বাংলা তারিখের সঙ্গে সাম্যঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বাংলা তারিখ ছিল ৮ ফাল্গুন ও ১ পৌষ। কিন্তু পরিবর্তিত বর্ষপঞ্জিতে তা যথাক্রমে ৯ ফাল্গুন ও ২ পৌষ হিসেবে পালন করা হয়। এসব বৈষম্য দূর করতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি একটি সভায় বসে। পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. অজয় রায়ের সভাপতিত্বে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক জামিল চৌধুরী, অধ্যাপক আলী আসগর এবং কমিটির সদস্য সচিব ও একাডেমির পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জি। পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেগুলো হচ্ছেÑ বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম ছয় মাস বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ৩১ দিন গণনা করা হবে। এ ছাড়া কার্তিক থেকে মাঘ এবং চৈত্র মাস ৩০ দিনে গণনা করা হবে। শুধুমাত্র ফাল্গুন মাস ২৯ দিনে গণনা করা হবে। তবে ইংরেজি বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে (লিপইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিনে গণনা করা হবে। সংশোধনের ফলে ১৪২৩ বঙ্গাব্দ থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বাংলা তারিখ হবে ৮ ফাল্গুন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের বাংলা তারিখ ১২ চৈত্র, ৮ মে রবীন্দ্রজয়ন্তী ২৫ বৈশাখ, ২৫ মে নজরুলজয়ন্তী ১১ জ্যৈষ্ঠ এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের বাংলা তারিখ হবে ১ পৌষ।