রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ ও স্বাধীন-বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের আহ্বান জানালেন টিলারসন
রাশিদ রিয়াজ : রোহিঙ্গা নির্যাতনে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের সুপারিশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, রাখাইনে যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার ওপর স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চালাতে হবে। তিনি মিয়ানমার সফরে যেয়ে দেশটির রাজধানী নেপিডোতে সামরিক বাহিনীর সুপরিকল্পিত সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং অস্ত্রধারী বেসরকারি গোষ্ঠীগুলোর হাতে ব্যাপক নির্যাতনের বিশ্বাসযোগ্য খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
টিলারসন নেপিডোতে যখন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব বক্তব্য রাখছিলেন, তখন তার পাশে ছিলেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। এসময় টিলারসন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য ৪০ কোটি ৭০ লাখ ডলার অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন আইন প্রনেতা মিয়াানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিল আনার কথা বললেও টিলারসন বলেন, পরিস্থিতি বলে এই নিষেধাজ্ঞা সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে না। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অঙ লাইং-এর সাথেও এক বৈঠকে মিলিত হন।
এদিকে জাতিসংঘ যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনকে জাতিগত নিধনের সঙ্গে তুলনা করেছেন তার সঙ্গে একমত হতে আরো অধিক তথ্য প্রয়োজন বলে জানান টিলারসন। তিনি বলেন, রাখাইনে যা ঘটছে তাতে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অনেকগুলো বৈশিষ্ট রয়েছে। তবে তা জাতিগত শুদ্ধির মানদ- পূরণ করে কি না তারজন্যে আরো তথ্য প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র তার অংশীদারদের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে যাতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের জন্যে দায়ী ব্যক্তিদের দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা যায়। আমরা চাই মিয়ানমার সফল হোক, এদেশে গণতন্ত্র সফলতা পাক। কিন্তু এটা খুব কঠিন যখন আপনি বিশ্বের এক প্রান্তে বসে থাকেন এবং বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল ও তার ছবি দেখেও কিছু করতে না চান। এ সংকট নিরসনে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি। রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপের বিষয়টি ‘ভাল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মন্তব্য করেও টিলারসন এধরনের জটিল পরিস্থিতি ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলার আহবান জানান।
যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মিয়ানমারের স্টেটকাউন্সিলর অং সান সু চি বলেন, রোহিঙ্গা প্রশ্নে তিনি কখনো নীরব ছিলেন না। আমার বক্তব্য হয়ত যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ বা আকর্ষণীয় মনে হয়নি। টিলারসনের মিয়ানমার আগমনকে ‘উন্মুক্ত উদারতার’ সঙ্গে তুলনা করে সু চি বলেন, আমি কোনো উদ্দীপক বক্তব্য দিচ্ছি না।মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনাই এখন খুবই জরুরি। গত সেপ্টেম্বরে সু চি বলেছিলেন, রোহিঙ্গা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তদন্তের দাবিতে তিনি ভীত নন।
সিএনএন’এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে আগত মনে করলেও দশকের পর দশক ধরে তারা রাখাইনে বাস করে আসছে।