সৌদি সঙ্কট নিয়ে দুই শীর্ষ দুই আলেমের মতামত
সৌদি আরবে চলমান সঙ্কটে মুসলিম বিশ্বে কি ধরনের প্রভাব পরতে পারে? বর্তমানে আমাদের মুসলিম দেশগুলো নানা সঙ্কট ও ঝামেলায় জর্জরিত। মুসলিম বিশ্বের এ সঙ্কটের কারণ হলো, তাদের মাঝে দ্বীনি শিক্ষা নেই এবং ইসলামের দেখানো পখে না চলার কারণ। আজ মুসলিম দেশ একেক অমুসলিম দেশের পেছনে ছুটছে। এটাই মুসলিম বিশ্বের মহাসঙ্কট। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণে মতামত দিয়েছেন দুই শীর্ষ আলেম। তাদের মতামত তুলে ধরেছেন,
সৌদি আরবের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙে যেতে পারে : আল্লামা উবাইদুল্লাহ ফারুক
রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার শাইখুল হাদিস আল্লামা উবাইদুল্লাহ ফারুক। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পদক। বর্তমানে সৌদি আরবে যে সঙ্কট শুরু হয়েছে তা দ্বীনি শিক্ষা না থাকা এবং ইসলামের দেখানো পথে না চলার কারণে। আর এ সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় ১৬০ কোটি মুসলমানের হৃদয়ের স্পন্দন সৌদি আরবের অর্থনীতির মেরুদ- ভেঙ্গে পরতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এমন মতামত ব্যক্ত করেন।
সৌদি আরবে চলমান সঙ্কটে মুসলিম বিশ্বে কি ধরনের প্রভাব পরতে পারে ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের মুসলিম দেশ নানা সঙ্কট ও ঝামেলায় জর্জরিত। মুসলিম বিশ্বের এ সঙ্কটের কারণ হলো, তাদের মাঝে দ্বীনি শিক্ষা নেই এবং ইসলামের দেখানো পথা না চলার কারণে। আজ মুসলিম দেশ একেক অমুসলিম দেশের পেছনে ছুটছে।
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে সঙ্কট চললে ১৬০ কোটি মুসলমানের হৃদয়ের স্পন্দন সৌদি আরব এসব সঙ্কট থেকে নিরাপদ ছিল। সৌদি আরবের চলমান সঙ্কটে মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব পরতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
সৌদি আরবে অর্থনৈতিক প্রভাব পরতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লামা উবাইদুল্লাহ ফারুক বলেন, সৌদি আরবের চলমান সঙ্কটে অর্থনৈতিক প্রভাব অবশ্যই পরবে। এমনিতেই সৌদি আরবে কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছে। এর মধ্যে চলমান সঙ্কট অবস্থা। বিভিন্ন কোম্পানি দেওলিয়া হয়ে যাচ্ছে। এ সঙ্কটে সৌদি আরবের মেরুদ- ভেঙে যেতে পারে।
আমাদের দেশে সৌদি সঙ্কটের কোন প্রভাব পরতে পারে বলে আপনি মনে করেন। এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লামা উবাইদুল্লাহ ফারুক বলেন, আমাদের দেশে সৌদি সঙ্কটের প্রভাব পরবে। কারণ আমাদের দেশের বিরাট একটা অংশ সৌদি প্রবাসি। যেহেতু সৌদির কম্পানিগুলো অর্থনৈতিক সঙ্কটে পরছে। সুতরাং আমাদের দেশের সৌদি প্রবাসিরা বিপাকে পরবে। সুতরাং আমাদের দেশেও সৌদির চলমান সঙ্কটে অর্থনৈতিক প্রভাব পরবে।
সৌদির কাছে এখন ক্ষমতাই মূল : ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
চট্টগ্রামের ওমরগণি এম ই এস কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, বর্তমানে সৌদি আরবে যে ঘটনা শুরু হয়েছে তা শুধু ক্ষমতার লড়াইয়ের জন্য। আর একারণে মুসলিম বিশ্বের সম্পর্ক যদি ভেঙেও যায় তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। দৈনিক আমাদের অর্থনৈতিকে দেওয়া এক সাক্ষতকারে তিনি এমন মতামত ব্যক্ত করেন। মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন সৌদি আরবের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসলায়েলের সঙ্গে মিত্রতার সমালোচনা করে বলেন, যখনই কোনো রাজতন্ত্রে অসৎ ষড়যন্ত্র শুরু হয় তখনই রাজতন্ত্র ভেঙ্গে যায়। তিনি বলেন, সৌদি আরবে ১০০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে রাজতন্ত্র চলে আসছে। সম্প্রতি বাদশাহ সালমান তার ছেলে মোহাম্মদকে পরবর্তী বাদশাহ বানানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এ জন্য সৌদি রাজ পরিবারের যারা তার প্রতিবন্ধক হতে পারে তাদের দমন করার জন্য আটক করে রেখেছে।
সৌদি সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি করেছে। বিলিয়ন টাকার অস্ত্র কিনেছে। সম্প্রতি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তার ক্ষমতা প্রতিদ্বন্দ্বিবিহীন করতে রাজ পরিবারের ১১ জন ব্যক্তি ও সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করে রেখেছে। আল ওয়ালিদ বিন তালাল সৌদি ধনকুবের মালিক। তাকে জেলে বন্দী করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোরঞ্জনের জন্য।
আল ওয়ালিদ বিন তালাল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধ ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সম্পর্কে বলেছিল, সে বাবার টাকায় মার্কিন রাজনীতি চালানোর ষড়যন্ত্র করছে। সৌদির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সৌদি রাজপরিবার থেকে বাদশাহ সালমান চাচ্ছে তার ছেলের মাঝে সৌদি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা। এ জন্য মার্কিনীদের সঙ্গে মিত্রতা করছে। যেন তার এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো ধরনের বিপ্লব বা ষড়যন্ত্র করার সাহস না পায়। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ের জামাই কুশনার একজন ইহুদী। সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সস্পর্ক কোন পর্যায়ের? এমন প্রশ্নের জবাবে ডক্টর মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, লজ্জার বিষয় হলো সৌদি আরব ইসলায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক করার জন্য উদগ্রীব। ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক জোরদার করছে। ইসরায়েল সৌদি আরবে বিনিয়োগ করবে। ইউনেস্কোর ভোটে সৌদি আরব কাতারের মুসলিম প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে ইসরায়েলের প্রতিনিধিকে ভোট দেয়। এর জন্য মাত্র দুই ভোটে কাতারের মুসলিম প্রতিনিধি পরাজিত হয়। আরবলীগে ১৮ টি মুসলিম দেশ, আর ওআইসিতে ৫৭ টি দেশ রয়েছে। অথচ এসব সংস্থা ব্যর্থ হয়ে পরে আছে। এর নেপথ্যে ইহুদীবাদিরা কাজ করছে।