যে গুণাহের কারণে কবুল হয় না ইবাদত
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। আল্লাহ তায়ালার ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য ইবাদতের সাথে সাথে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হয়। বিশেষ করে কবীরাহ বা বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ইবাদত কবুল হওয়ার প্রধান শত। কবীরাহ গুনাহ যা তওবা ছাড়া মাফ হয় না। একটি গুনাহই জাহান্নামে পৌঁছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন- “তোমরা যদি গুরুতর নিষিদ্ধ কাজ অর্থাৎ বড় বড় পাপসমূহ থেকে বিরত থাক তাহলে আমি তোমাদের অন্যান্য লঘু পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিব এবং তোমাদেরকে মহা সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবো। (সূরা নিছা-৩১)। সুতরাং মহান আল্লাহর এই মহা অনুগ্রহ তথা মহা পুরস্কার পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই কাবীরা গুনাহ সমূহ থেকে বেঁচে ইবাদত করতে হবে। কবীরাহ গুনাহগুলো হচ্ছে:-
(১) শিরক করা। মহান আল্লাহর সৃষ্টিজগতের কোন কিছুর সাথে তাঁর সাদৃশ স্থাপন করার নাম শিরক। কি কি কাজ করলে শিরক হয় তা জানার পরেও কেউ যদি শিরক করে এবং শিরক করা অবস্থায় মারা যায় তবে মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করবেন না (ময়িদাহ-৭২,নিছা-৪৮ ও ১১৬, বুখারী-৩৩৩৪,মুসলিম-২৮০৫)
(২) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। (বানী ইসারাইল-২৩,লুকমান-১৪,বুখারী-৬৮৭১)
(৩) অন্যায়ভাবে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা-(বানীইসরাইল-৩৩,মায়িদাহ-৩২,নিছা-৩০। বুখারী-৬৮৭১)
(৪) মিথ্যা কথা বলা। (মু’মিন-২৮,তুর-১১,১২,বুখারী-১৯০৩)
(৫) মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা। (ফুরকান-৭২, বুখারী-৬৮৭১, মিশকাত-৩৭৫৯)
(৬) জাদু করা। জাদুকর বা গণকের কাছে গেলে ৪০দিন পর্যন্ত তার কোন ইবাদতই কবুল হয় না। (বাকারা-১০২,বুখারী-৭৬৬,মুসলিম ৮৯)
(৭) দারিদ্রের ভয়ে সন্তান হত্যা করা ও জন্ম নিরোধ করা। (বানী ইসরাইল-১৭/৩১)
(৮) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা.কে নিয়ে হাসি তামাশা করা। (তাওবা-৬৫ ও ৬৬, নিসা-১৪০, মায়িদা-৫৭, ৫৮)
(৯) অবৈধ অছীলা করা। (মায়িদাহ-৩৫)
(১০) মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে অমান্য করা। (জ্বিন-২৩,নিছা-১৪,আহযাব-৩৬)
(১১) আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত দ্বীনকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করা। (সাবা-৩৪)
(১২) আল্লাহর বাণী ও বিধানকে মিথ্যা পতিপন্ন করা এবং অহংকার করে তা হতে দুরে সরে থাকা। (আরাফ-৩৬ ও ৪০ )
(১৩) আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করা অথবা তাঁর নিকট থেকে আগত সত্যকে অস্বীকার করা (হুদ-১৮আনকাবুত-৬৮,আরাফ-৩৭,সাফ-৭)
(১৪) রাসুল সা.কে অমান্য করা, অবিশ্বাস করা এবং তাঁর নামে মিথ্যাচার করা (নিছা-৮০ মুহাম্মাদ-৩৩,আহকাফ-৩১,ইমরান-১৮৪ বুখারী-১১০)
(১৫) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত অন্যকে শাফায়াতের অধিকারী মনে করা। (বুখারী-৬৫৬৫)
(১৬) রাসুল (সা.)এর উপর অবতীর্ণ শরীয়তকে অসম্পূর্ণ (পরিপূর্ণ নয়) মনে করা, মানব রচিত দ্বীনকে বিশ্বাস করা (জাসিয়া-১৮,ইমরান-৮৩ নিসাা-১১৫)
(১৭) কাফির-মুশরিকদের ধর্মও সঠিক হতে পারে বলে সন্দেহ করা ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা। (ইমরান-২৮, বাকারা-২২১, তাওবা-২৮)
(১৮) রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক আনীত দ্বীনকে অপছন্দ করা। (মুহাম্মাদ-৯, মুমিনুন-৭০, তাওবা-৪৮)
(১৯) ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগ করা। (মুদ্দাসির-৪০-৪৩,আনকাবুত-৪৫,তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, নাসাঈ-৪৬৪, মুসলিম-১৫৪)
(২০) শারঈ কারণ ব্যতীত নামাজে শৈথিল্য প্রদর্শন করা। (মাঊন-৪ ও ৫)
(২১) যাকাত আদায় না করা। (মু’মিনুন-৪)
(২২) কোন ওজর ব্যতীত রমজানের সিয়াম (রোজা) নষ্ট করা। (বাকারা-১৮৩ ও ১৮৫, বুখারী-১৮৯১,১৮৯৪ মুসলিম১১৫১)
(২৩) সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হাজ্জ পালন না করা। (ইমরান-৯৭,বুখারী,মুসলিম,মিশকাত)
(২৪) আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। (মুহাম্মাদ-২২ ও ২৩, নিসা-৩৬। বুখারী,৪৮৩০মুসলিম-২৫৫৪)
(২৫) বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক, যেনা-ব্যাভিচার করা, সমকামীতা (লাওয়াতাত) ও যৌন বিকারে লিপ্ত হওয়া। (বানী ইসরাইল-৩২, বুখারী-৫৫৯০)
(২৬) মদ্যপান করা। (মায়িদাহ-৯০,বুখারী-৫৫৯০)
(২৭) সুদ গ্রহন ও প্রদান করা। (বাকারা-২৭৫,২৭৮,২৭৯,ইমরান-১৩০,রূম-৩৯,বুখারী-২০৮৬)
(২৮) ইয়াতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা ও তার উপর অত্যাচার করা। (বণী ইসরাঈল-৩৪,বুখারী-২৭৬৬,২৫৬৩,মুসলিম-৮৯)
(২৯) জিহাদ চলাকালে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ণ করা। (আনফাল-১৫ ও ১৬, বুখারী-২৭৬৬,২৫৬৩,মুসলিম-৮৯)
(৩০) শাসক কর্তৃক শাসিতের উপর অত্যাচার করা। (শুরা-৪২,বুখারী,মুসলিম,মিশকাত-৩৬৮৭)
(৩১) আমানতের খেয়ানত করা। (আনফাল-২৭)
(৩২) অহংকার করা। (লুকমান-১৮, মুসলিম-৯১,মিশকাত-৫১০৮)
(৩৩) তাস, কেরাম, দাবা বা লুডুর সাহায্যে জুয়া খেলা। (মায়িদাহ-৯০, মুসলিম,মিশকাত-৪৫০০)
(৩৪) সতী-সাধ্বী নারীর বিরুদ্ধে অপবাদ বা কুৎসা রটনা করা। (নূর-৪, বুখারী- ২৭৬৬,২৫৬৩,২৫৭৫,মুসলিম- ৮৯)
(৩৫) রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা। (ইমরান-১৬১,বুখারী-৩০৭৩,মুসলিম-১৮৩১)
(৩৬) চুরি-ডাকাতি করা। (মায়িদা-৩৮)
(৩৭) মিথ্যা শপথ করা। (মুসলিম,মিশকাত ৩৭৬০)
(৩৮) কারও উপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার ও জুলুম করা। (শূরা-৪২, হুদ-১০২ ও ১১৩, বুখারী-৪৬৮৬)
(৩৯) হারাম উপার্জন করা ও ভক্ষণ করা। (বাকারা-১৮৮, মুসলিম,মিশকাত-২৭৬০)
(৪০) বিচার কার্যে অসততা ও দূর্নীতি করা। (মায়িদাহ-৪৪,৪৫,৪৭)
(৪১) ঘুষ খাওয়া। (বাকারা-১৮৮)
(৪২) নারীরা পুরুষদের এবং পুরুষরা নারীদের সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা ধারণ করা। (বুখারী-৫৮৮৫,৫৪৫৭,৫৩৫৩)
(৪৩) নিজ পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ না দেওয়া এবং পাপাচারের প্রশ্রয় দেওয়া। (ত্বাহা-১৩২, ইব্রাহীম-৪০)
(৪৪) ঋতুবর্তী স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া। (বাকারা-২২২)
(৪৫) অন্যকে দেখানো বা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভাল কাজ করা। (বাকারা-২৬৪,নিছা-৩৮,১৪২, মাউন-৪-৬)
(৪৬) বিশ্বাস ঘাতকতা, বিশ্বাস ভঙ্গ করা। (হুজুরাত-১১ ও ১২)
(৪৭) দান খয়রাত করার পর তার খোটা দেওয়া। (বাকারা-২৬৪)
(৪৮) অপরের সম্পদ আত্মস্যাৎ করা। (বাকারা-১৮৮,নিছা-২৯, বুখারী-৩১৯৬)
(৪৯) ওয়াদার খেলাপ,ওয়াদা ভঙ্গ করা। (নাহল-৯১, ৯২, ৯৪ ও বণী ইসরাঈল-৩৪)
(৫০) বিনা অপরাধে কোন মুসলিমকে অভিশাপ বা গালি দেওয়া। (বুখারী: ৪৮,৬০৪৪,৬০৪৭,৭০৭৬, মুসলিম:১২৪)
(৫১) জ্যোতিষী বা গণকের কথা বিশ্বাস করা। (বুখারী-৩২১০, ২৯৭০,২৯৮০,মিশকাত,৪৫৯৫)
(৫২) স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের অধিকার নষ্ট করা। (নিছা-৩৪, বাকারা-২২৮)
(৫৩) প্রাণীর ছবি আঁকা। (বুখারী-৫৯৪৯-৫১,৫৫১৭-১৯,৫৪১,মুসলিম,২১০৮-০৯)
(৫৪) অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রকাশ করা। (লুকমান-১৮, বানী ইসরাইল-৩৭,আরাফ-৩৬। মুসলিম-৯১,মিশকাত-৫১০৮)
(৫৫) ওজনে কম দেওয়া বা বেশী নেওয়া। (বানী ইসরাইল-৩৫, আরাফ-৮৫, শুআরা-১৮১ ও ১৮৩, হুদ-৮৪ও ৮৫)
(৫৬) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া। (নিছা-৩৬, বুখারী-৬০১৬,মুসলিম-৪৬)
(৫৭) পুরুষের টাখনুর নীচে কাপড় পরা। (বুখারী,মুসলিম,মিশকাত-৪৩১১-১২)
(৫৮) পুরুষের স্বর্ণ ও রেশমের কাপড় ব্যবহার করা। (বুখারী-৫৫৯০)
(৫৯) যৌতুক আদান প্রদান করা। (সূরা আল-বাকারা-১৮৮, সূরা নিসা-৪)
(৬০) জেনে শুনে নিজেকে অন্যের সন্তান বলে পরিচয় দেওয়া অর্থাৎ নিজ পিতার পরিবর্তে অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দেওয়া। (বুখারী,মুসলিম,মিশকাত-৩৩১৪-১৫)
(৬১) কৃপণতা করা বা অপব্যয় করা। (বাণী ইসরাঈল-২৬,২৭,২৯, নিছা-৩৭, আরাফ-৩১, বুখারী-১৪৪২, মুসলিম-১০১০)
(৬২) মুসলিমদের ক্ষতি সাধণে অমুসলিমকে সাহায্য করা, তাদের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করা ও শত্রুর নিকট প্রকাশ করা। (মুমতাহিনা-১,২,মায়িদাহ-৫১, হুজুরাত-১২)
(৬৩) সাহাবীদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করা, সমালোচনা করা বা তাঁদেরকে গালি দেওয়া। (বুখারী-৩৬৭৩)
(৬৪) অপরের দোষ তাঁলাশ, গীবত করা অর্থাৎ চোগলখুরী করা বা নিন্দা করা। (হুজুরাত-১১ ও ১২, হুমাজাহ-১, বুখারী-৬০৫৬)
(৬৫) গান-বাজনা নৃত্য করা ও দেখা। (লুকমান-৬, আরাফ-৩৩, বুখারী-৫৫৯০)
(৬৬) পর্দার বিধান লংঘন করা। (মুমিনুন-৫)।
(৬৭) সামর্থ থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা। (বুখারী:৮৪১, তিরমিজি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ি ও ইবনে মাজা)
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ