চামড়া নগরী বনাম নদী দুষণ
রাজেকুজ্জামান রতন
চামড়া নগরী করতে চান প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী এবং চট্টগামে। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের যে একটা অপার সম্ভাবনা আছে সেটা দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে। প্রতি বছর ২ কোটির ওপরে গরু, ছাগল, ভেড়া জবাই করা হয়। এটা কাঁচা মালের উৎস। এই চামড়াকে যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাত করা, চামড়াজাত দ্রব্য উৎপাদন করা আমাদের দুর্বলতা থাকার কারণে এত বিপুল কাচামালকেও আমরা কাজে লাগাতে পারি নি। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের একটা দারুন সম্ভাবনা আছে। আবার শুধুমাত্র র্গামেন্টস নির্ভর নয় এর পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রে যদি আমরা বলি, তাহলে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত আমাদের চামড়া শিল্প জায়গা করে নিয়েছে। আমাদের চা, পাট রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আমাদের ওষুধ শিল্পের একটা সম্ভাবনা আছে। বড় সম্ভাবনা এখন র্গামেন্টস শিল্পের পরই চামড়া শিল্প। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা, চামড়া জাতীয় পণ্য উৎপাদন করার ক্ষেত্রে নগরী কেন্দ্রিক এর কোনো বিকল্প নাই। আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো, ঢাকার হাজারীবাগে যে চামড়া শিল্প নগরী গড়ে উঠেছিল, তার কুফল ভোগ করতে হযেছে আমাদের নদীগুলোকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে। সাভার হেমায়েতপুরে যে চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে সেখানেও নদী দুষণ, পানি দুষণের ভয়াবহ আশংকা করা হচ্ছে। চামড়া শিল্প নগরী গড়ে উঠবে এটা যেমন প্রয়োজন সাথে সাথে যদি নদী দুষণ বন্ধ করা না যায় তাহলে চামড়া শিল্পের মধ্য দিয়ে হয়তো বৈদেশিক মুদ্রা আসবে কিন্তু আমরা নগরী দুষণের মধ্যে দিয়ে ধ্বংসের দিকে পড়ে যাবো। দেশীয় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে যাবে। একদিকে যেমন শিল্পের বিকাশ প্রয়োজনীয়, সাথে সাথে শিল্পের নামে আমাদের এখানে যেন অব্যবস্থাপনা তৈরি না হয়। গোটা পৃথিবীতে পরিবেশ রক্ষা করা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকে বাংলাদেশে এটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, আমাদের জমি কম, জনসংখ্যা বেশি। আমাদের দেশ পানির দেশ। ফলে এখানে যদি নদী নষ্ট হয়, তাহলে আমাদের আর ভবিষ্যত বলতে কিছু থাকবে না। বৈদেশিক মুদ্রা আনবো তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের স্বাস্থ্য, সম্পদ। ফলে চামড়া শিল্প নগরী গড়ে উঠবে এটা যেমন একটি সম্ভাবনার দিক সাথে সাথে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশের দিকটা তোয়াক্কা না করা। সরকারের এক্ষেত্রে অনিয়ম, অবহেলা, দুর্নীতি আমাদের সাধারণ জনগনের ওপর যেন নতুন কোনো দূর্ভোগ না আসে সেটাও আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
পরিচিতি : কলামিষ্ট ও কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য, বাসদ
মতামত গ্রহণ : সানিম আহমেদ
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ