জাতিসংঘে ওআইসি’র রোহিঙ্গা প্রস্তাবে রাশিয়া ও চীনের ‘না’ এবং ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের ‘বিরত থাকা’ কেন?
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা তথা ওআইসি প্রস্তাবিত ‘জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিয়ে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে গত বৃহস্পতিবার রেকর্ডসংখ্যক অর্থাৎ ১৭১টি দেশের মাঝে ১৩৫টি দেশ স্বপক্ষে ভোট দিয়েছে। অথচ চীন ও রাশিয়াসহ মোট ১০টি দেশ যেমন বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, তেমনি ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানসহ ২৬টি দেশ ভোট প্রদানে বিরত থেকেছে। এছাড়া ২২টি দেশ ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি। কিন্তু কেন? তারা কী বাংলাদেশের শুভাকাঙ্খি বা বন্ধুপ্রতীম দেশ নয়?
দৃশ্যত আইসল্যান্ডের প্রতিনিধি আইনার গানারস্সনের সভাপতিত্বে ৭২তম অধিবেশনে ‘জাতিসংঘের থার্ড কমিটি’ হচ্ছে সামাজিক, মানবিক ও সংস্কৃতি বিষয়ক। এতে ইরিত্রিয়া, কাতার ও হাঙ্গেরি থেকে যথাক্রমে নেবিল ইদ্রিস, আলানৌদ কাসিম আল তামিমি ও ডোরা কাসজাস সহ-সভাপতি এবং গুয়েতিমালার আন্দ্রেস মলিনা লিনারেস র্যাপেটিয়ার হিসেবে নিযুক্ত। সেখানে উদ্ভুত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ওআইসির প্রস্তাবে ১৬ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। এতে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে সেনা অভিযান বন্ধ করা, অবিলম্বে রাখাইনে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাসমূহকে প্রবেশাধিকার প্রদান, রাখাইনে সংঘটিত মানবাধিকার লংঘনে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদায় বাসভূমিতে ফেরত গ্রহণ, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন এবং মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত নিয়োগ প্রদান উল্লেখযোগ্য। আর এই প্রস্তাবনাগুলোর ভিত্তিতেই ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে চূড়ান্ত ভোট হওয়ার কথা।
এর আগে চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ বিষয়ক একটি খসড়া প্রস্তাব ওআইসিতে দাখিল করে মিসর। সেটিকে ৯৭টি দেশ সমর্থন জোগায়। তারও আগে ২০১৫ সালে অং সান সুচির ক্ষমতা গ্রহণের আগে একই বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। লক্ষণীয়ভাবে তাতে ১৯ দফা সুপারিশের মাঝে রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি মাত্র সুপারিশ ছিল। সেক্ষেত্রে ভোট গ্রহণকালে ১০৪টি দেশ পক্ষে, ১৩টি দেশ বিপক্ষে এবং বাংলাদেশসহ ৩৭টি দেশ ভোট প্রদানে বিরত থাকে। শুধু তাই নয়, অতীতে যখনই মিয়ানমার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব আনা হয়েছে, বাংলাদেশ তাতে নির্বিকার থেকেছে। ফলশ্রুতিতে এখন বাংলাদেশের উপর চেপে বসা মিয়ানমারের সমস্যায় ভারতসহ প্রতিবেশি শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটান যেমন নির্বিকার রয়েছে, তেমনি ক্ষমতাধর রাশিয়া ও চীন সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবু সান্ত¡না এই যে, রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিকতায় ওআইসির বর্তমান প্রস্তাবে ১৩৫টি দেশ অকাতরে এগিয়ে এসেছে।
তথাপি যেদিন ওই প্রস্তাবটি জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে, সেদিনও বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাস্তুভূমি রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ থাকেনি; বরং সেনাপ্রধান মিন অং লায়েং বলেছেন, মিয়ানমারের নাগরিকরা মেনে নিলেই রোহিঙ্গারা ফিরতে পারবে। এতে সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার উদ্দেশ্যে আগামী সপ্তাহে মিয়ানমার যাচ্ছেন। কিন্তু সর্বশেষ রাশিয়া, চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের ভূমিকায় দ্বিপক্ষীয় ওই আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে প্রতীকী আশ্বাসের পরিবর্তে আন্তর্জাতিকরণ বা ‘রেসপেক্ট টু প্রটেক্ট’, সংক্ষেপে ‘আরটুপি’র ক্ষেত্রে সবিশেষ গুরুত্ব দেয়াটাই হবে সমীচীন। নচেৎ রোহিঙ্গা সংকটের বোঝাটি বাংলাদেশের উপরই কালক্রমে বর্তাবে।
ই-মেইল: নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স