সম্পদের বিনিময়ে ছাড় পাচ্ছেন দুর্নীতির দায়ে আটক সৌদিরা
রাশিদ রিয়াজ : ১১ জন সৌদি প্রিন্স, মন্ত্রী সহ অন্তত ২০০ প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আটক করা হলেও তাদের মধ্যে কয়েকজন সম্পদ ও অর্থকড়ির বিনিময়ে ছাড়া পাচ্ছেন। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দুর্নীতি দমন কমিটির প্রধান হিসেবে তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ১৭ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে বলে মার্কিন পর্যবেক্ষক ও চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। তুরস্কের অনলাইন মিডিয়া ইয়েনি সাফাক বলছে ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কয়েকজন মুক্তি পেতে চুক্তি নামায় স্বাক্ষর করেছেন এবং তারা ব্যাংক বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলেছেন ও কেউ কেউ তাদের ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের শেয়ারপত্র ছাড় করেছেন।
সৌদি কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির দায়ে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির বিনিময়ে তাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে হয় তাদের সম্পদ হস্তান্তর করতে হবে অথবা নগদ অর্থ দিতে হবে। আটক ব্যক্তিদের অনেকে বাধ্য এধরনের প্রস্তাবে সাড়া দিচ্ছেন। তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। রয়টার্স সৌদি সূত্র বলেছে আটক ব্যক্তিদের অনেকে মুক্তি পেতে তাদের ব্যাংক একাউন্ট নগদ অর্থ তুলতে, প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপত্র বেচে দিতে বা সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। একাধিক সৌদি প্রিন্স ছাড়াও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, মন্ত্রী, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের মুক্তির ব্যাপারে এধরনের দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছেন। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রিন্স আওলাদ বিন তালাল যিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বে বিনিয়োগে সৌদি প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। আটক একজন সৌদি ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে তার ব্যাংক একাউন্ট বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ তুলে নিয়েছেন। আরেক উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তা তার চার বিলিয়ন রিয়ালের শেয়ারপত্র হস্তান্তর করেছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালে গত সপ্তাহে সৌদি কর্তৃপক্ষ অসামঞ্জস্য আয় জব্দ সহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেন। তবে আটক ব্যক্তিদের সম্পদ বা অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে সৌদি কর্তৃপক্ষ এখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। তবে সৌদি সূত্র দাবি করেছে আটক ব্যক্তিদের ৭০ ভাগ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে সৌদি সরকার। আটক ব্যক্তিদের রিয়াদে ৫ তারকা হোটেল রিৎজ কার্লটনে রাখা হয়েছে। তারা যদি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দিতে রাজি হয় তাহলে তাদের মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা শুরু করা হবে। এক্ষেত্রে সৌদি সরকার আটক ব্যক্তিদের সম্পদের পরিমাণ বা অসামঞ্জস্য আয়ের উৎস সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান, তদন্ত দল ও অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সহায়তা নিচ্ছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তে এপর্যন্ত ২০৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং এ তদন্ত সৌদি আরবের বাইরেও করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ১’শ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন আটক ব্যক্তিরা।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে এক শীর্ষ ব্যবসায়ী হচ্ছে মোহাম্মদ আল-আমোদি যার সম্পদের পরিমাণ ফর্বসএর হিসেবে ১০.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, কৃষি ও জালানি খাতে তিনি সৌদি আরব ছাড়াও সুইডেন, ইথোপিয়া সজ বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছেন। আটক আরেক শীর্ষ ব্যবসায়ী হচ্ছেন সালেহ কামেল যার সম্পদের পরিমাণ ২.৩ বিলিয়ন ডলার। সৌদি ব্যাংক কর্মকর্তা ও পরামর্শকরা রয়টার্সকে জানিয়েছে আটক ব্যক্তিরা সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের অসামঞ্জস্য আয়ের বিনিময়ে মুক্তি পেতে দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছেন।