‘নায়কদের এমনই হতে হয়’
অভি মঈনুদ্দীন : রাজধানীর গুলশানে সেন্ট্রাল মসজিদের কাছেই নায়কের বাড়ি। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই হাত উঁচু করে দেখিয়ে দিয়ে বলবেন, ‘ঐ বাড়িতে নায়ক থাকেন’। খুঁজে পেলাম নায়কের বাড়ি। বহুদিন পর কোনো নায়কের বাড়িতে প্রবেশ করার মুহূর্তে আমার নিজের মাঝে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছিল। কারণ কয়েকটি। এক. সিনেমার নায়ক সুঠাম দেহের অধিকারী ওয়াসীমের সঙ্গে কখনোই আমার দেখা হয়নি। দুই. যদি কোনো কথায় ভুল করে ফেলি ফিরে যেতে হবে নাতো গন্তব্যে? এমন নানান আশঙ্কা কাজ করছিল আমার মনে। সকাল ঠিক ১১টায় নায়কের বাড়ির ড্রইংরুমে প্রবেশ করি। সঙ্গে আলোকচিত্রী মোহসীন আহমেদ কাওছার। ড্রইং রুমে বসেই ওয়াসীম অভিনীত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গান, দৃশ্য বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কয়েক মিনিট যেতে না যেতে এবার সত্যি সত্যিই চোখের সামনে এলেন নায়ক। বিস্ময় হয়ে আমি তাকিয়ে রইলাম। চুপ থাকা আমাকেই পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘এই, তুমিই তো অভি মঈনুদ্দীন?’ ঘোর থেকে ফিরে এসে বললাম, ‘জী। আমিই।’ আমি দাঁড়িয়েই প্রশ্ন করলাম, ‘এখনো, আগেরই মতো, কিন্তু কীভাবে সম্ভব? প্রশ্ন শুনে ওয়াসীম শুধুই হাসলেন। শুধু এতটুকুই বললেন, ‘বিশ্বব্যাপী নায়কদের এমনই হতে হয়। নায়ক যখন সামনে আসেন, তাকে যেন নায়কের মতোই মনে হয়।’
ওয়াসীমের কথা শুনে আমারও বারবার তাই মনে হলো। তিনি যদি এখনো হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে হেঁটে যান, ঠিকই সবার বুঝতে বাকি থাকবে না যে তিনি একজন নায়ক, তিনিই নায়ক ওয়াসীম। একটু একটু করে গল্পের ডালপালা বাড়ছে। ফাঁকে ফাঁকে চলছে ক্যামেরার ফ্রেমে ওয়াসীমকে বন্দি করার চেষ্টা। ক্যামেরায় স্থিরচিত্র ধারণের সময় ওয়াসীমকে দেখে সালমান খানের এই যুগে এসে ফিগারের প্রতি যতেœর কথা মনে করিয়ে দেয় চল্লিশ বছর আগের সেই ওয়াসীমের কথা। সেই সময়ই তিনি ছিলেন এমন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে তখন মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়া তার শেষ। বলছি ১৯৭০ সালের কথা। সেই সময়ই সিনেমা ভাগ্য তাকে আঁকড়ে ধরে। গুলিস্তানের ফিল্ম পাড়া থেকে তার ডাক আসে। নিজে যোগ্য কি না এমন প্রশ্নই ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ওয়াসীম প্রথমদিনে তাকে ডাকা পরিচালক মোহসীন, নাসিমা খান, আহমাদ জামান চৌধুরী খোকাকে। যাচাইয়ের পর ওয়াসীম নায়ক হিসেবে পরিপূর্ণ, যেন তারই প্রমাণ মিলে। শুরু হলো নায়োকোচিত জীবনের পথচলা। মোহসীন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রে ববিতার বিপরীতে একজন সাধারণ ছেলের চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ওয়াসীমের নায়ক জীবন। প্রথম চলচ্চিত্রেই নায়ক হিসেবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। প্রশ্ন রাখি, এরপর তো আপনি অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন? জবাবে ওয়াসীম বলেন, ‘এরপর টানা ত্রিশ-চল্লিশটি সুপার-ডুপার হিট চলচ্চিত্রে আমি অভিনয় করেছি। সেসময় আমার জীবনের ঘড়ির কাঁটায় কখন রাত হয়েছে, কখন দিন এসেছেÑ আমি জানতাম না। শুধু কাজ করতাম। দর্শকের ভালোলাগা, ভালবাসার জন্যই ছিল আমার নিবেদিত জীবন। পরিচালকদের চেষ্টায়, দর্শকের ভালবাসায় আমি ওয়াসীম হয়ে উঠি। দর্শকের মাঝেই আমি আজীবন বেঁচে থাকতে চাই।’ সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী