আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে পিছিয়ে পড়ছে পোশাক শিল্প
আরিফুর রহমান তুহিন : বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে পিছিয়ে পড়ছে। এ শিল্পে নেতৃত্বদানকারী অন্যান্য দেশ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় রপ্তানিকারক বাংলাদেশ এখনো পুরনো প্রযুক্তি নির্ভর। ফলে প্রতিযোগীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ এই খাত।
বিজিএমইএ বলছে, শুধুমাত্র সময়মত স্যাম্পল পাঠাতে না পারার কারণে এই শিল্প বছরে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে। এছাড়া রপ্তানির প্রতিটি ধাপে প্রযুক্তির অভাবে লোকসান হচ্ছে এই খাতটির।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অন্য দেশগুলো প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা এখনো প্রযুক্তির পূর্ণ ব্যবহার করছে না। ফলে আমরা পিছিয়ে পরছি। আমাদেরকে প্রযুক্তিতে এগোতেই হবে। এর বিকল্প নেই।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদি বলেন, পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে হলে প্রযুক্তিতে এগোতে হবে। ইতিমধ্যে অনেক কারখানা আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। কিছু কারখানার সংস্কার চলছে। ধীরে ধীরে আমরাও প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো।
ওয়ার্ল্ড স্টপ এক্সপোর্টস এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক ও অ্যাক্সেসরিজ রপ্তানিতে প্রথম স্থানে থাকা চীনের বর্তমান বার্ষিক রপ্তানি প্রায় ১৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রবৃদ্ধি ৩.৪৫ শতাংশ। এই খাতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি মাত্র ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রথম অবস্থানে থাকা দেশটির সাথে দ্বিতীয় অবস্থানের দেশটির রপ্তানির ব্যবধান প্রায় ১২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের থেকে প্রায় ৫গুণ বেশি রপ্তানি করা এই দেশটির উৎপাদন খরচ অনেক বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের পোশাক শিল্পে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান ভূমিকা হিসেবে কাজ দেশটির প্রযুক্তির ব্যবহার ও রাজনৈতিক স্থিতিশিলতা। ফলে ক্রেতা দেশগুলো চীনের সাথে ব্যবসা করার ব্যাপারে আস্থা রাখতে পারছে। ইতিমধ্যে দেশটি পোশাক উৎপাদন শিল্প থেকে সরে আসতে চাইছে। তবে চীনের পরের অবস্থানে থাকা বাংলাদেশকে পরবর্তী প্রধান রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে মনে করছে না প্রতিষ্ঠানটি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকাকে মনে করছেন তারা।
পোশাক শিল্প নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য থেকে জানা যায়, চীন পোশাক শিল্পে প্রযুক্তির বিপ্লব শুরু হয় মূলত ১৯৫০ সালের দিকে। ১৯৮৪ সালে এসে পুরোদমে পোশাক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারে আসে দেশটি। বর্তমানে বিশ্বের দামি ব্রান্ডের প্রায় সিংহভাগ পোশাক উৎপাদন করছে দেশটি। চীনের বেশিরভাগ পণ্য উৎপাদিত হয় হাতের স্পর্শ ছাড়া। এছাড়া দেশটির শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা দেয়ার জন্য রয়েছে আলাদা শিক্ষা কেন্দ্র। প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনাসহ অনেক সুবিধা পেত কারখানার মালিকরা।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস পোশাক শিল্প এর উল্টো। এখনো দেশের বেশিরভাগ কারখানা অনেক পুরনো প্রযুক্তিতে চলছে। সুতা উৎপাদন থেকে শুরু করে প্যাকেজিং সবই ম্যানুয়ালিভাবে সম্পন্ন হয়। এছাড়া কর্মরতরা বেশিরভাগ অদক্ষ এবং দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত না থাকায় উৎপাদনও কম হচ্ছে। একই সাথে প্রযুক্তির অভাবে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না। গবেষণাগুলো বলছে, যদিও ক্রেতা দেশগুলোর প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি