রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় রকমের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন
ফারমিনা তাসলিম : চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেছেন, এদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা এসেছে, পরে তাদের ফেরতও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় রকমের অন্তর্ভুক্তি, নজরদারি ও তদারকি থাকা দরকার। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের মধ্যস্থতার আশ্বাস প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল ঢাকায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে আগ্রহী চীন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তা বিষয়ে চীনের এই বক্তব্য কী অর্থ বহন করে? জবাবে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা- তা উপলব্ধি করছে চীন। চীন আগে থেকেই এ ব্যাপারে সাহায্য করতে চায়। দেশটির নতুন করে দেওয়া আশ্বাস কেবলমাত্র পুনরুক্তি। প্রথম থেকেই চীন চায়, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক সমাধানে আসুক। অন্যদিকে সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকভাবে সংকট নিরসন করতে চায়। অপরপক্ষে মিয়ানমার চায় ’৯২-এর চুক্তি অনুযায়ী সংকট সমাধান করতে, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সমাধানের কথা বলা হয়েছে।
সমস্যা সমাধানে দুদেশের আলাদা প্রস্তাবের কি বিশেষ কোনো গুরুত্ব আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চীন আগে থেকেই বলে আসছে, মিয়ানমার-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে সমস্যার সমাধান করুক। এতে তারাও সাহায্য করবে। দ্বিপাক্ষিকভাবে মীমাংসা করতে বাংলাদেশের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বড় সমস্যা হচ্ছে যে, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা এসেছে, আবার তাদের ফেরতও নিয়ে গেছে। কিন্তু এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। এতে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্তি দরকার। তার মানে এই নয় যে, সমস্যার সমাধান আর্ন্তজাতিকভাবে হচ্ছে। শরণার্থী ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি দ্বিপাক্ষিকভাবেই হবে। কিন্তু সে সমস্যার আরও দুটি দিক আছে। সেগুলো হচ্ছে, একচেটিয়াভাবে কিছু লোক বাংলাদেশে চলে এসেছে। আরেকটা হচ্ছে মিয়ানমারের এই জনগোষ্ঠীর উপর সহিংসতা, হত্যা ও নিধন করা হচ্ছে এবং মানবতা বিরোধী নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে। এই জিনিসগুলো শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, সারা পৃথিবীর সমস্যা। ওই জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রশ্নই হল সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মাঝখানে ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি যাতে বিষয়টিকে আরও জটিলতর না করে এমন আহ্বান জানিয়েছেন। বক্তব্যটির মাধ্যমে তিনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, তিনি মূলত বোঝাতে চেয়েছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুকে আর যেন জটিল না করে। যদি এ সমস্যাকে তাদের সহজ মনে হয়, তবে তারাই সংকট সমাধান করে দেখাক! কিন্তু বাংলাদেশ তো সব দেশকে বলছে না বরং তারাই এগিয়ে আসছে। এর আগেও এমন সংকট তৈরি হয়েছে, তখন তো তারা আসেনি। এখন মানবতার বিরুদ্ধে প্রচ- বর্বরতম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে দেখেই তারা আসছে। সূত্র- বিবিসি বাংলা