কারিগরি বোর্ডের ৮ আঞ্চলিক কেন্দ্র হচ্ছে
ফাতেমা আহমেদ : বদলে যাচ্ছে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে মহাপরিপকল্পনার অংশ হিসেবে এই বোর্ড ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কারিগরি বোর্ডে গতি আনতে সারা দেশে ৮টি আঞ্চলিক কেন্দ্র করা হচ্ছে। আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান হবেন একজন উপ–পরিচালক। একই সঙ্গে নতুন ৩৫৮টি পদ সৃজনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিগগিরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। মানবজমিনএ ব্যাপারে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব নায়েব আলী ম–ল বলেন, কারিগরি বোর্ডের জনবল সংকট নিরসন ও গতি বাড়াতে আমরা নতুন জনবল কাঠামোর প্রস্তাব করেছি। এটা পাস হলে বোর্ডের চিত্র পুরোই পাল্টে যাবে। তিনি বলেন, বতর্মান নিয়োগ আরো স্বচ্ছ করতে বুয়েটের মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগ দেয়া হবে।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে পাঠানো নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাস্তবধর্মী ও কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। সমগ্র বাংলাদেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত। আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের জনগণকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য এ শিক্ষার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রযুক্তিসমূহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও আধুনিকায়নে সদা সচেষ্ট। এ ছাড়া সরকারের নানামুখী উন্নয়ন ও পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের ভিশন ও মিশন বাস্তবায়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে একটি যুগপোযোগী জনবল প্রণয়ন করা হয়েছে। বোর্ডের কর্মপরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক নতুন জনবল নিযুক্ত করার নিমিত্তে বিদ্যমান ২১২টি পদের সঙ্গে নতুন ৩৫৮টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।প্রস্তাবিত পদগুলো হলো– সিস্টেম অ্যানালিস্ট ১জন, ডেপুটি কন্ট্রোলার অব এক্সাম ৩ জন, ডেপুটি ডিরেক্টর ১৮জন, কারিকুলাম স্পেশালিস্ট ১জন, প্রোগ্রামার ২জন, স্পেশালিস্ট ২জন, ল’ অফিসার ১জন, সেকশন অফিসার ১জন, অ্যাকাউন্টস অফিসার ১জন, অ্যাসিসট্যান্ট কো–অর্ডিনেটর ১২জন, অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর ২৫ জন, অ্যাসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ১জন, এসিসট্যান্ট প্রোগ্রামার ১২ জন, মাল্ডিমিডিয়া ডেভলপার ১জন, ইমাম ১জন, ট্রান্সপোর্ট অফিসার ১জন, জুনিয়র ল’ অফিসার ১জন, অ্যাসিসট্যান্ট ইনফরমেশন অফিসার ১জন, কম্পিউটার অপারেটর ৭ জন, ক্যাশিয়ার ৮জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ১১জন, ইউডিএ কাম ডাটা প্রসেসর ২৫জন, অ্যাকাউন্টস অ্যাসিসট্যান্ট কাম ডাটা প্রসেসর ১জন, ড্রাইভার ১০জন, এলডিএ কাম ডাটা প্রসেসর ১জন, মোয়াজ্জিন ১জন, অফিস অ্যাসিসট্যান্ট কাম ডাটা প্রসেসর ২২ জন, পারসনাল অ্যাসিসট্যান্ট ১জন, ফটোগ্রাফার ১জন, অফিস অ্যাটেনডেন্ট ৬৮জন, কম্পিউটার ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট ১জন, লিফট ম্যান ৩ জন, মেশিন অ্যাটেনডেন্ট ১জন, গার্ডেনার ১জন, পোর্টার ৪৯জন, সিকিউরিটি গার্ড ১৬জন, সুইপার ৫জনসহ মোট ৩৫৮টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।বোর্ড সূত্র জানায়, ১৯৬৭ সালের ৭ মার্চ ইস্ট পাকিস্তান টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। যার বর্তমান নাম বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ট্রেড পর্যায়ের পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ, সনদপত্র প্রদান, পরিদর্শন ও মূল্যায়নের কাজ করে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং লেভেলে ৩৪টি টেকনোলজি, এসএসসি ও দাখিলে (ভোকেশনাল) ৩১টি, শর্টকোর্স (৩৬০ ঘণ্টা) ৯৭টি, এনটিভিকিউএফ এ ৭০টি অকুপেশনে ২১২টি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা দেয়া হয়। সারা দেশে সাত হাজার ৯২৪টি প্রতিষ্ঠান তদারকি করে কারিগরি বোর্ড। অপরদিকে সারা দেশের স্কুল ও কলেজ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আটটি বোর্ড রয়েছে। বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিলেও জনবল সংকটের কারণে বোর্ডের কাজে গতি নেই। সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো সারা দেশে গজিয়ে উঠা বেসরকারি পলিটেকনিক ও ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সনদ বাণিজ্য করছে। নতুন জনবল নিয়োগ হলে মনিটরিং জোরদার হবে। এতে করে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত হবে বলে বোর্ডের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।