শীতল পাটি
ড. শিহাব শাহরিয়ার : শীতল পাটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প। এটি মূলত বয়ন শিল্প। বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের পেশাজীবী গ্রামীণ শিল্পীদের হাতে বহু প্রাচীন কাল থেকে শীতল পাটি তৈরি হয়ে আসছে। শীতল পাটি এক ধরনের মসৃণ শৈত্যবাধক ও আরামদায়ক পাটি। ‘সুত’ নামক এক ধরনের ‘নল’ জাতীয় সবুজ গাছ থেকে তৈরি হয় শীতল পাটি। অঞ্চলভেদে এই মুর্তা গাছকে বলা হয় পাটিপাতা, পাটিকেও বা পাইতারা। আর পাটশিল্পীদের বলা হয় পাটিয়াল বা পাইটাল। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালি, ঝালকাঠি, সিরাজগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় জলাশয় ধারে নিচু ভূমিতে জন্মে প্রচুর মুর্তাগাছ এবং এসব অঞ্চলেই শীতল পাটি তৈরি হয়। মুর্তা গাছের কা- থেকে ধারালো দা দিয়ে সরু বেতি বের করা হয়। যাবে বলা হয়ে থাকে ‘সলই’। এইসব বেতিগুলো বা সলই পাকা ও চকচকে করার জন্য ভাতের ফ্যানের সঙ্গে আমড়া পাতা ও বোয়ালিলতা সংমিশ্রণ করে গরম পানিতে সিদ্ধ করা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় সাদা শীতলপাটি। আর গরম পানিতে রং মিশিয়ে নকশা তোলার জন্য মাঝের অংশের বেতিগুলোকে রঙিন করা হয়। এই বেতি দিয়ে তৈরি করা হয় রঙিন শীতল পাটি। শীতলপাটি গ্রামের হাট বাজারগুলোতে বেচাকেনা হয় এবং এগুলো ব্যবহার হয় সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে।
লেখক : কবি ও গবেষক
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ