মাদক নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে
রবিউল আলম : জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসন সফলতার পরিচয় দিয়েছে। বিশ্বে যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দারা জঙ্গি দমনে সফলতা দেখিয়েছে, এতে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। আমরা গর্ব করে বলতে পারি, এরা আমাদের পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু হতাশ হতে হয় মাদক নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা দেখে, প্রশ্ন উঠে আমাদের পুলিশ বাহিনী, র্যাব ও গোয়েন্দা বিভাগ মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ কেন? পুলিশ চাইলে কি-না পারে, আমি বিশ্বাস করি পুলিশ কি-না পারে? কিছুদিন আগের কথা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সাহেবের নির্দেশে, আলহাজ্ব মো. সাদেক খানের ভূমিকায়, ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার, এডিসি ওয়াহেদুল হক, ওসি জামাল উদ্দীন মীর এক অসাধ্য সাধন করেছিলেন মোহাম্মদপুরস্থ জেনেভা ক্যাম্প মাদকমুক্ত করে।
প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, পুলিশ সবকিছুই করতে পারে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই এখন মাদকমুক্ত ঘোষণা ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি। জেনেভা ক্যাম্পে মাদক বিক্রয় এখন দ্বিগুন আকার ধারণ করেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন। সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল শত আন্দোলন করে যতটুকু প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারেনি, তারচেয়ে শতগুন প্রভাব বিস্তার করছে মাদক। মাদক এখন সরকারের প্রতিপক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পুলিশ যদি সরকারের অন্তর্ভূক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হয়, তবে মাদক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় কেন বারংবার ব্যর্থ হচ্ছে, সেই প্রশ্ন জনগণের। যে পুলিশ জঙ্গি নিয়ন্ত্রণসহ শত সফলতার দাবিদার, তারাই মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, তা মানতে পারছি না। মাদকের মূল বিষয়গুলো বের করতে হবে। আমাদের পুলিশ বাহিনী এতটা ব্যর্থ হতে পারে না। ভয়াবহ মাদক নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া সরকারের সফলতা প্রমাণ করা যাবে না, মাদক নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। মাদকের বিক্রয়, ব্যবহার নির্মূলে পুলিশের যা কিছু করার প্রয়োজন, সেটা প্রয়োগ করতে হবে। ইতোমধ্যে ঘুরে দাড়াচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, যোগ হচ্ছে মোবাইল ট্র্যাকার হাই ফ্রিকোয়েন্সি টেলিফোন। ( তথ্যসূত্র: দৈনিক আমাদের অর্থনীতি, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭)।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ সদিচ্ছা থাকলে, প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ও আইন প্রয়োগ করতে পারলে মাদকের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, মাদকবিহীন দেশে নির্মল বাতাসে এদেশের মানুষ চলাচল করতে পারবে । মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্তের আশায় মুখ বুজে বসে থাকলে কিছুই হবে না। মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সকলের আন্তরিকতা থাকতে হবে। সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক সমন্বয় ও ঐক্য ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নয়ন হবে না। মাদক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া খেলাধুলা, শিক্ষা, সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। বর্তমানে মাদক রাষ্ট্রের এক মহা অভিশাপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এই অভিশাপ থেকে সকলকে মুক্ত করতে হবে। জঙ্গি নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল বিভাগ কৃতিত্ব দেখাতে পারলে, মাদক নিয়ন্ত্রণে কেন সফল হবে না? এই প্রশ্ন বার বার জনগণের মনে উত্থাপিত হচ্ছে। প্রশাসনকেই এর যথোপযুক্ত জবাব দিতে হবে। সরকারের শত সফলতা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সুনামটা মাদক কেড়ে নিতে পারে না। কেড়ে নিতে দেওয়া হবে না। তাহলে আমাদের দল করা চলে না। মাদকের জন্য দলীয় এমপি, কাউন্সিলর, এলাকার জনপ্রতিনিধি, কর্মীবাহিনী, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। মাদক নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ