নতুন সংবিধানের আওতায় নেপাল নির্বাচন শুরু হচ্ছে ২৬ নভেম্বর
ইমরুল শাহেদ : নতুন সংবিধানের আওতায় আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক সংসদের নির্বাচন। দুটি পর্যায়ে এই নির্বাচন সম্পন্ন হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৭ ডিসেম্বর। গালফ টাইমস জানিয়েছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে নেপালে ফেডারেল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
যে সংবিধানের আওতায় এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেটিতে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সাংসদরা। এই সংবিধানের অনুমোদনের মাধ্যমে ২০০৬ সাল থেকে চলে আসা প্রায় এক দশকের গৃহযোদ্ধের অবসান ঘটানো হয়। মাওবাদীদের সৃষ্ট এই গৃহযোদ্ধে প্রায় ১৬ হাজার লোক মারা যায়। মাওবাদীদের ‘অস্ত্র সমর্পণ করে সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে’ নেপাল রাজতন্ত্র থেকে জনমুখী ফেডারেল প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
কাঠমু-ু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলেকশন কমিশন ইতোমধ্যেই ব্যালট পেপার মুদ্রণের কাজ শেষ করেছে। ইলেকশন কমিশনের মুখপাত্র নবরাজ দকল বলেছেন, ‘প্রায় পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ব্যালট পেপার মুদ্রণের কাজ রোববার রাতেই শেষ হয়েছে। এখন ৩২টি জেলায় সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। এসব জেলাতেই প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
গত ২৭ বছরে নেপালে ২৫টি সরকার আসা-যাওয়া করেছে। ১৯৯০ থেকে নেপালে বহুদলীয় নির্বাচন হচ্ছেÑকিন্তু একটি পার্লামেন্টও পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। তার মধ্যে গত চার বছরে দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এমন চারজনের তিনজনÑকে পি শর্মা ওলি, পুষ্প কমল দহল ও শের বাহাদুর দেওবা এখন আবার লড়ছেন পরবর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এর আগে ওলি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একবার, দহল দুবার এবং দেওবা চারবার।
২০০৮ ও ২০১৩ সালে নেপালে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে এবং এ বছরের মাঝামাঝি তিন দফায় হয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। পূর্ববর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন ছিল মূলত সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে সংবিধানসভার নির্বাচন। সেই হিসাবে ১৭ বছর পর এবার জনপ্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট গড়তে নেপালে পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। এ ছাড়া আসন্ন ভোট নেপালের জন্য এবং দক্ষণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত। কারণ, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নেপাল প্রকৃতই এক ফেডারেল শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চলেছে। এই নির্বাচনে প্রায় ৯০টি দল প্রার্থী দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ক্ষমতাসীন নেপালী কংগ্রেস ও দুই দলীয় কমিউনিস্ট জোটের মধ্যে।
২০১৫ সালে নেপাল বহু বছরের চেষ্টায় যে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে, তাতে দেশের জন্য সাতটি প্রদেশভিত্তিক এক ফেডারেল শাসনকাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন হতে চলেছে। নির্বাচন শেষে ফেডারেল পার্লামেন্ট দেশের জন্য একজন প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে। প্রাদেশিক সংসদগুলো নির্বাচিত করবে সাতজন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় ফেডারেল পার্লামেন্ট এবং প্রাদেশিক সরকারÑউভয়ের নির্বাচন হবে একই সঙ্গে। শ্রীলঙ্কা ব্যাতীত এ অঞ্চলের কোনো দেশে প্রদেশ ও ফেডারেল পার্লামেন্টের নির্বাচন একই দিন অনুষ্ঠানের দৃষ্টান্ত নেই। বলা যায়, নেপালের নির্বাচন কমিশন এক দুরূহ দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহে। সূত্র : কাঠমু-ু পোস্ট, গালফ টাইমস