‘বড় দুই দলের রেষারেষি দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করবে’
তাসকিনা ইয়াসমিন: রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার পোস্টের দোহাই দিয়ে হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনায় গত রোববার এ এলাকা সফর করেন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত সোমবার সেখানে যান বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উভয় নেতাই হিন্দুধর্মাবলম্বীসহ সকল সংখ্যালঘু হামলার ঘটনায় উভয় দলকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন। এ দোষারোপ এ হামলা প্রতিরোধে কি আদৌ কোন প্রভাব রাখবে? এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। ১৯৯০ এরপর থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্ন সময়ে যে নিপীড়ন হামলা হয়েছে, ২০১১ থেকে এই পর্যন্ত সময়ের চিত্রটা একই। এই পুরো সময়ের হামলাগুলোর ক্ষেত্রে কোন ভিন্নতা আমাদের কাছে নেই। একটা ভিন্নতা আমরা দেখেছি ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলন যখন হচ্ছিল তখন মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে হামলা চালানো হয়। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর ২৭ দিন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একটানা হামলা চালানো হয়। তারপরে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে একটানা সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চলে। তখন সেটা করল বিএনপি-জামায়াত। আবার এখন এই হামলা একই ধরনের হচ্ছে। এ হামলা করছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং মূলত এরা বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুমুক্ত করতে চায়। বিভিন্ন জায়গায় এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হচ্ছে তবে সেটা এখন রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে হচ্ছে না। আমরা যেটা দেখছি সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত সরকারি দলের নামধারি নেতা-কর্মী এরাও হামলা করছে এটা আমাদের কাছে একটা নতুন দিক। ২০১১ এর পরে হয়ত রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে কোন হামলা হচ্ছে না তবে এই হামলার সঙ্গে সরকারি দলের একাংশ যুক্ত এটার মেলবন্ধন আমরা দেখতে পাচ্ছি। রংপুরে সম্প্রতি যে হামলা হয়েছে সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামীলীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদককে হামলার দায়ে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। এতে করে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এরা জড়িত। অতএব আমাদের দাবি আওয়ামীলীগ-বিএনপি যাতে সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিয়ে রাজনীতি না করে। রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এর সমাধান বের করা এই দুইদলের মূল দায়িত্ব। পারস্পারিক রাজনৈতিক দোষারোপ মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অস্ত্র হতে পারে। এটি হলে তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে বিপন্ন করবে। সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানে যেন সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে বাধ্য হতে না হয়। এটি হলে তা গণতন্ত্র বিকাশে যা কিছু অর্জন তার জন্য শুভফল বলে আনবে বলে মনে করি না। সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন