জিম্বাবুয়ের স্বেচ্ছাচারী মুগাবে দম্পতির পরিণতি কী?
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে : সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার এক সপ্তাহ পর ক্ষমতাচ্যুতির নজির কোথাও কি রয়েছে? তাও আবার স্বদলীয় বহিষ্কারাদেশ ও অভিশংসনের বেঁধে দেওয়া ২৪ ঘণ্টার পর যা অবিসম্ভাবী হচ্ছে। এতে বার্তা সংস্থাগুলো জিম্বাবুয়ের ৩৭ বছরের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের বিদায় সংবাদে অপেক্ষমাণ। একদিকে পশ্চিমাবিশ্বের উপর্যুপরি চাপ ও বহির্বিশ্বে প্রবাসী জনগোষ্ঠীর অধীর উৎকণ্ঠা, অন্যদিকে সামরিক অভ্যুত্থান ও সামরিকজান্তা ও মধ্যস্থতাকারীদের মাঝে দেন-দরবার, মাঝে জনসমক্ষে জিম্বাবুয়ের ওপেন ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হওয়া, সবই গত এক সপ্তাহে রীতিমতো গোলক ধাঁধা হিসেবে বিধৃত। এখন তারই যবনিকাপাতের অপেক্ষা মাত্র!
কেননা গত রোববার জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফ এর কেন্দ্রীয় কমিটির এক বিশেষ সভা থেকে মুগাবের বহিষ্কারাদেশটি বার্তাসংস্থা রয়টার্স প্রচার করে এবং আধঘণ্টা যেতে না যেতেই প্রেসিডেন্ট মুগাবে পদত্যাগ করবেন বলে জানা যায়। এর আগে সেনাবাহিনী, বিরোধী দল, জানু-পিএফ পার্টি ও জিম্বাবুয়ের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন একত্রে মুগাবের পদত্যাগের দাবিটি উত্থাপন করে। তারা জানায়, সেনাবাহিনী যে কাজ শুরু করেছে, তাতে মুগাবের পদত্যাগ ছাড়া গত্যন্তর নেই। সেনাবাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে শনিবার রাজধানী হারারেতে মুগাবেবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। অন্যদিকে মুগাবের অনুগত মুক্তিযোদ্ধা ও উদারপন্থীদের সংগঠনও তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানায়। অথচ ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়ে স্বাধীন হলে মুগাবের প্রতি অসীম অনুগত ছিল এই মুক্তিযোদ্ধারা। এই ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে কে হবেন মুগাবের উত্তরসূরি, সেই দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। একপর্যায়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন ম্যানানগাগওয়াকে বহিষ্কারের পাশাপাশি স্ত্রী গ্রেসকে বসানোর পরিকল্পনা করেন মুগাবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির একাংশ তা মেনে নেয়নি। মুগাবের চেয়ে প্রায় চার দশকের কম বয়সী গ্রেসকে উত্তরসূরি হিসেবে মেনে নিতে সেনাবাহিনীও বিব্রত বোধ করে। তারা মঙ্গলবার রাতেই অস্ত্র গোলাবারুদ ও ট্যাংক নিয়ে রাজধানী হারারে দখল করে নেয় এবং মুগাবেকে সপরিবারে গৃহবন্দি করে। সেনাবাহিনী জানায়, তারা মুগাবের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং জনগণকেও তাদের মতামত প্রদানে উৎসাহিত করে, তাতে একটি ফলাফলের অভ্যুদয় ঘটবে বলে জানায়। শুক্রবার জানু-পিএফ পার্টির ১০টি আঞ্চলিক শাখার মাঝে ৮টিতে ভোটাভুটি হয়, যেখানে সবগুলোতে প্রেসিডেন্ট ও দলীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে মুগাবের পদত্যাগের পক্ষে ভোট পড়ে। এমনকী আঞ্চলিক নেতাদের অনেকে টেলিভিশনে হাজির হয়ে মুগাবের পদত্যাগ দাবি করেন। এমনটি আগে কখনো ঘটেনি, যদিও গত এক দশকে প্লাটিনাম গোল্ডসহ খনিজ সম্পদে ভরপুর জিম্বাবুয়ে খাদ্যসংকট, বুভুক্ষা ও অর্থনৈতিক নিষ্পেষণে মুগাবের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ক্রমেই তীব্রতর হয়, বিশেষ করে গত এক বছরে। এতে মুগাবের স্ত্রী গ্রেসকেও জানু-পিএফ পার্টি থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। ফলে এই দম্পতির দলগত অবস্থানটিও হয়ে পড়ে সংকটাপন্ন।
গতকালই প্রেসিডেন্ট মুগাবের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাবটি এনেছেন ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির নতুন নেতা ম্যানানগাগওয়া। তিনি জানান, অভিশংসনের ওই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে দুদিনের মতো সময় লাগবে। অর্থাৎ বুধবারেই মুগাবের বিদায়ঘণ্টা নিশ্চিত হচ্ছে। এর আগে পদত্যাগের জন্য নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়েছে সোমবার। সেনা কর্মকর্তারা জানান, মুগাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের একটা ‘রোডম্যাপ’ বা ‘পরিকল্পনা’ রয়েছে। তারা আরও বলেছেন যে, বরখাস্ত হওয়া ভাইস-প্রেসিডেন্ট এমারসন ম্যানানগাগওয়া দ্রুতই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরছেন। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে তার পরিচিতিটিও ন্যক্কারজনক অর্থাৎ ‘দ্য ক্রোকোডাইল’ বা ‘কুমির’ বলে।
তাই এখন দেখার অপেক্ষা এই সুদীর্ঘ শাসক মুগাবে কাকে কীভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং তার ক্ষমতালিপ্সু স্ত্রী গ্রেস, যার ঔদ্ধত্য ও বিলাসিতা সীমাহীন কলঙ্কে আচ্ছাদিত, তারা একত্রে কি দক্ষিণ আফ্রিকায় আশ্রয় নেবেন নাকি কোনো বিচারের মুখোমুখি হবেন? কানাডায় জিম্বাবুয়ের প্রবাসীরাও ওই উত্তরের প্রতীক্ষায়!
ই-মেইল : নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স