ভারতের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া সকল রেলপথ চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
বিশ্বজিৎ দত্ত : ১৯৪৭ সালের দেশভাগ এবং ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ১২টি রেল সংযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়া সব রেল সংযোগ আবার চালু করার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আওতায় এই রেললাইনগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রেলসংযোগ শুধু ভারত নয় এটি ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হবে সিংগাপুর পর্যন্ত। বাংলাদেশের উন্নয়ন যে মাত্রায় হচ্ছে তাতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রক্ষণশীলতা উন্নয়নকে পিছিয়ে দিবে। আমরা তাই ভারতকে বলেছি বন্ধ হয়ে যাওয়া সকল রেলপথ চালুর জন্য।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পুরনো ১২টি রেল সংযোগের মধ্যে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া পর্যন্ত একটি লাইন আবার চালু করতে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন। এর ৫ কিলোমিটার অংশ রয়েছে ভারতে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। মোট ব্যয় হচ্ছে ৯৬৭.৫ কোটি টাকা।
২০১৩ সালে দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে একটি চুক্তির ফলে আগরতলা-আখাউড়া লাইন চালু হচ্ছে। এই লাইন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, ও মিয়ানমার হয়ে ইস্তানবুল থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ট্রান্স-এশিয়া রেলওয়ের অংশে পরিণত হতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলা ও কলকাতার মধ্যে ভ্রমণ সময় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে। ১ হাজার ৬১৩ কিলোমিটার পার্বত্য পথ কমে দাঁড়াবে মাত্র ৫১৪ কিলোমিটারে। গত বছরের ১৩ জুলাই রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও ভারতের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু এই লাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আগে আরও কয়েকটি রেললাইনের মাধ্যমে ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশ সংযুক্ত ছিল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলোনিয়া-ফেনি (বাংলাদেশ),খোয়াই-আখাউড়া এবং অমরপুর থেকে ভৈরব বাজার। চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিল আসামের করিমগঞ্জ ও মহিশাসন।
বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের চারটি পুরনো রেল সংযোগ রয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে এই রেলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ভারত এই সংযোগগুলো আবারো সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করছে। উভয় দেশই হারিয়ে যাওয়া রেলওয়ে সংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে কলকাতা ও খুলনার মধ্যে যাত্রীবাহী সাপ্তাহিক ট্রেন পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে। ১৯৬৫-পূর্ব বরিশাল এক্সপ্রেস এই রুটে বেশ জনপ্রিয় ছিল। এদিকে রাধিকাপুর ও বিরলের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন পরিষেবাও চালু হচ্ছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পশ্চিম অংশের মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের চারটি রেল সংযোগ রয়েছে। এগুলো হলো, পেট্রাপোল-বেনাপোল, গেদে দর্শনা, রাধিকাপুর-বিরল এবং সিংহবাদ-রোহানপুর।
নতুন দুটি রেল সংযোগ হবে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের চিলাহাটি এবং বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল থেকে অসমের মহিশাসনের মধ্যে। উভয় দেশে আগামী দিনগুলোতে নতুন রেল সংযোগ চালুর ব্যাপারে আশাবাদী। দুই দেশ আরও দুটি রেল সংযোগ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এগুলো হবে উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশের পঞ্চগড় থেকে শিলিগুড়ি, ত্রিপুরার সীমান্ত নগরী বেলোনিয়া থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর।
ব্র্রিটিশ আমলে কলকাতা, গোয়ালন্দ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মধ্যে নিয়মিত নৈশ ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল। দেশভাগের আগে দার্জিলিং মেল কলকাতা (শিয়ালদহ স্টেশন) শিলিগুড়িকে সংযুক্ত করেছিল পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) মধ্য দিয়ে। এই লাইনটি ছিল গেদে-দর্শনা ও চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে। শিয়ালদহ থেকে তিনটি ট্রেন পরিষেবা, ইস্ট বেঙ্গল মেল ১৯৬৫ পর্যন্ত চলাচল করত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৩৭ বছর পর ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে প্রথম ট্রেন চলাচল করে। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত