একাত্তরের পর বিভিন্ন বাহিনীতে ফেরা ভাতা পাবেন মুক্তিযোদ্ধারাও
হুমায়ুন কবির খোকন : একাত্তরে সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর যে সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের জন্য আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকেই এই ভাতা প্রযোজ্য হবে।
সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন বাহিনীতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের আগে কর্মরত অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর তারা পুনরায় বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীতে যোগ দেওয়ায় কোনো ভাতা পাননি, যদিও বাকি মুক্তিযোদ্ধারা নির্দিষ্ট হারে ভাতা পেয়ে আসছেন। এ কারণে তাদের ভাতা দিতে বিভিন্ন সময়ে দাবি জানানো হচ্ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,তাদের প্রায় সকলেই এখন অবসরে চলে গেছেন। অনেকের পরিবার বেশ কষ্টে আছেন। আমরা সেজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাহিনীতে যারা ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর ভাতার ব্যবস্থা আমরা করব।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে বাড়ানো হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠদের ভাতা ৩০ হাজার টাকা,বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্তদের জন্য ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রমদের জন্য ২০ হাজার এবং বীর প্রতীকদের ভাতা ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
এছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ হাজার টাকা করার কথাও শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য শিক্ষা ভাতা, কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে বিবাহ ভাতা, উৎসব ভাতা, দেশে-বিদেশে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা সরকার দিচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে অনেকেই ছিলেন এই গেরিলাদের আশ্রয় দিয়েছেন, খাদ্য দিয়েছেন,অস্ত্র রেখেছেন,অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন, সংবাদ পরিবেশন করে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের যুদ্ধটা ছিল জনযুদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেও সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারগুলোর মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী পরে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যান এবং ৩ বাহিনীর প্রধানরা সেখানে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠর উত্তরাধিকারী এবং খেতাবপ্রাপ্ত ১০১ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের হাতে চেক ও শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া সেনাবাহিনীর ১০ জন, নৌ-বাহিনীর একজন ও বিমান বাহিনীর একজনকে ২০১৬-১৭ বছরের জন্য ‘শান্তিকালীন পদক’ এবং সেনাবাহিনীর ১০ জন, নৌ-বাহিনীর দুইজন ও বিমান বাহিনীর দুইজনকে ২০১৬-১৭ সালের ‘ওসমানীয়া সেবা পদক’ তুলে দেন সরকার প্রধান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) তারিক আহমদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌ-বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত