বেসরকারি পর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছেনা গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম
মতিনুজ্জামান মিটু : যুগপোযোগি নীতিমালার অভাবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি পর্যায়ে গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছেনা। বেসরকারি পর্যায়ে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে দেশ ও জাতির জন্য উন্নয়নমূলক ওই আধুনিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। সরকারের প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর তার সক্ষমতায় গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজননের ৫০ থেকে ৬০ ভাগে মিটিয়ে থাকে।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. মীজানুর রহমান (কৃত্রিম প্রজনন ও ঘাস উৎপাদন) বলেন, সাভারের প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন ল্যাবরেটরি, রজশাহীর রাজাবাড়ি হাটের আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন ল্যাবরেটরি এবং ২১টি জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে উপযুক্ত ষাড় রেখে গভীর হিমায়িত এবং তরল সিমেন (বীর্য) উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিতরণ করা হয়। কেন্দ্রগুলো থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও টেকনিশিয়ানরা সুস্থ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করে থাকেন। এখনো পর্যন্ত সরকারি তরফেই মূলত গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। বেসরকারি উদ্যোগ খুবই সীমিত। এজন্য মূলত প্রয়োজনীয় প্রজনন নীতিমালার অভাবই দায়ী। নির্ধারিত শর্ত পুরণ করে বেসরকারি পর্যায়ে দুটি প্রতিষ্ঠান আমেরিকান ডেইরি (এডিএল) ও ব্র্যাক এ কাজে অংশ নিচ্ছে। এছাড়া লাল তীর লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদনের পর লাল তীর তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে।
২০০৭ সালের প্রজনন নীতিমালা দিয়েই এখনো চলছে গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম। বর্তমানে প্রজনন নীতিমালা যুগপোযোগি করার লক্ষে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্টেক হোল্ডারদের (অংশীজন) নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রজনন নীতিমালা যুগপোযোগি করার কার্যক্রম চলছে। আশা করা যায় দ্রুততম সময়েই নীতিমালা চূড়ান্ত হবে।
পশু চিকিৎসক ডা. নূর আলী বলেন, গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম নিঃসন্দেহ দেশ ও জাতির জন্য উন্নয়নমূলক এক আধুনিক কার্যক্রম। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য উন্নত ষাড়ের শুক্রাণু ব্যবহার ও সুস্থ গাভীর প্রজনন স্থাপন করতে পারলে বছরে দুই লাখেরও বেশি বাচ্চা পাওয়া সম্ভব। কোনো ঝামেলা ছাড়া অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসক দিয়ে কৃত্রিম প্রজননের কাজ করাতে হয়। প্রতি উপজেলাতে পশু সম্পদ উন্নয়নে সরকার একজন করে পশু চিকিৎসক নিয়োগ করেছেন। তাদের কাছ থেকে গরিব কৃষকসহ ওই এলাকার জনসাধরণ কৃত্রিম প্রজননসহ নানাবিধ পশু সমস্যার সমাধান পেয়ে থাকেন।
সাধারণত ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট কয়েকটি পদ্ধতির মাধ্যমে গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে। একটি ষাড়ের বীজ থেকে প্রতি বছর ৬০ থেকে ৮০টি গাভীর প্রজনন করানো সম্ভব। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ গাভী প্রজনন করানো যায়। স্বাভাবিকভাবে একটি ষাঁড় সর্বমোট ৭০০ থেকে ৯০০টি বাছুর প্রসবে ভূমিকা রাখতে পারে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অনেকাংশে সংক্রামক ব্যাধি রোধ করা যায় এবং গাভীকেও ষাঁড়ের আঘাত সইতে হয় না। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত
সম্পাদনা : আশিক রহমান