তাহলে কি রোহিঙ্গা তরুণরা হত্যার শিকার? রাজেকুজ্জামান রতন
সূচীর বক্তব্যে কোনো ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করছি না। একবার বলছেন যে, দুই পক্ষই গন্ডগোল করেছে। একবার বলছেন যে, তোমরা গন্ডগোল করো না। আরেকবার বলছেন যে, বাংলাদেশ চায় না যে রোহিঙ্গারা ফিরে যাক। আবার আন্তর্জাতিক মহলের কাছে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য বলছেন যে, ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু কেন তারা ওখান থেকে উচ্ছেদ হল, আর কি প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে? এ বিষয়টা স্পষ্ট না করলে এগুলো শুধু াত্র কথার কথায় পর্যবসিত হবে। কারণ, ১৯৮২ সালে সেখানে যে নাগরিকত্ব আইন করা হয়েছে, ওই আইনটা সংশোধিত না হলে রোহিঙ্গারা সব সময় এ রকম নিপীড়ন, উচ্ছেদ এবং নির্যাতনের মধ্যেই থাকবে। ১৯৯২ সালে যেটা ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেটাও কিন্তু সফল হয় নাই একই কারণে। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনটা সংশোধিত হয় নি বলে। তাহলে আমরা মনে করি যে, মিয়ানমারের প্রথম উচিত তাদের নাগরিকত্ব আইনটা সংশোধন করা। দুই. ওখান থেকে যারা উচ্ছেদ হয়েছে তাদের জায়গা জমি বাসা বাড়ি সমস্ত ক্ষয় ক্ষতি নিরূপন করে তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। তিন. এক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানকারী সংস্থার অধীনেই এটার একটা ব্যবস্থা করা। তা না হলে একদিকে তারা ডেকে নিয়ে যাবে। আরেক দিকে সামরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আবার তারা উচ্ছেদ হয়ে যাবে। চার. এই দরিদ্র, নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং তাদের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া। এগুলো যদি না করে তাহলে প্রতিদিন ১০০ করে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, এ রকম করে যদি ফিরিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে তিরিশ বছরেও এই রোহিঙ্গাদেরকে নেওয়া শেষ হবে না। কারণ, প্রতিদিন ১০০ করে নিলে বছরে যাবে ৩৬,০০০। তাহলে ১ লক্ষ রোহিঙ্গা ফেরত যেতে লাগবে তিন বছর। এই তিন বছরে আবার হয়তো ওখান থেকে দুই লক্ষ রোহিঙ্গা উচ্ছেদ হয়ে যাবে। ফলে এটা একটা অন্তহীন প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের মর্যাদা, স্বাধীনতা, অধিকার কোনো কিছুই প্রতিষ্ঠিত হবে না। ফলে আমরা মনে করি, এই সমস্ত শুধু কথার কথা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া নয়, কাজের কথাটা যেন বলতে পারেন। কেন রোহিঙ্গাদেরকে ওখান থেকে উচ্ছেদ করা হল, সে কারণটাকে নির্দিষ্ট করা। ওদের নির্যাতন, নিপীড়নের জন্য দায়ী যারা, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। নিপীড়িত ও বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আইনগত অর্থনৈতিক সমস্ত দায় দায়িত্বটা গ্রহণ করা। এ সব না হলে শুধু ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না। যে সমস্ত রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চাওয়া হবে। এখনো পর্যন্ত সূচীসহ মিয়ানমারের সরকার তারা স্বীকারই করছে না যে, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। ফলে এই গণহত্যার প্রয়োজনীয় তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এখন যেটা বলছে সেøা বার্নিং জেনোসাইড। মানে একটা নিরব ও ধীরে ধীরে গণহত্যা চালানো হয়েছে সেখানে। সেখানে নারীদের ওপর যে পরিকল্পিত নিপীড়ন চালানো হয়েছে, যাতে একটা জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। একে বলছে এথনিক ক্লিনজিং। এবং আমরা দেখেছি যে, বিপুল পরিমাণ শিশু এবং নারীরা এসেছে কিন্তু সেই পরিমাণ তরুণরা আসেনি। এরা কোথায় গেল? তাহলে কি তারা হত্যার শিকার? এর জবাব মিয়ানমার সরকারকে দিতে হবে। তাদের এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মতামত গড়ে তুলতে হবে, সেই সাথে দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিচিতি : কলামিস্ট ও কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য, বাসদ
মতামত গ্রহণ : সানিম আহমেদ
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ