‘প্রতিবেশী কূটনীতি’তে পাকিস্তানকে অগ্রাধিকার দিবে চীন
আরটিএনএন : ‘প্রতিবেশী কূটনীতি’তে পাকিস্তানকে অগ্রাধিকার দিবে। চীন কারণ, দেশ দুটি সবসময়ের কৌশলগত অংশীদার এবং পরস্পরের মূল স্বার্থগুলোতে একে অপরকে সমর্থন দেয়। ইসলামাবাদে সোমবার অনুষ্ঠিত ‘অষ্টম চীন পাকিস্তান কৌশলগত সংলাপে’র পরদিন মঙ্গলবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণায়ের মুখপাত্র লু ক্যাং এ কথা বলেন। ইসলামাবাদের সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন, চীনের সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং শুয়ানিউ এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়া।
সংলাপে কং পাকিস্তানকে সবসময়ের কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন বলে মুখপাত্র জানান। কং বলেন, ‘আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থগুলোতে আমরা পরস্পরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেই। চীন তার প্রতিবেশী কূটনীতিতে পাকিস্তানকে সবসময় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে।’
বৈঠকে উভয়পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। এর মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে: অঞ্চল ও সড়ক উদ্যোগ ও চীন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর; দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য; প্রতিরক্ষা; সন্ত্রাসদমন; সংস্কৃতি ও জনগণে জনগণের মধ্যে বিনিময়। চীনা কর্মকর্তারা জানান, শুধু পাকিস্তানেই চীন ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। উচ্চাভিলাষী সিপিইসি প্রকল্পে এই বিনিয়োগ ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একটি জেটি নির্মাণের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করবে চায়না ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম। এই কনসোর্টিয়ামের সাথে ‘চায়না পাওয়ার হাব জেনারেশন কোম্পানি প্রা: লিমিটেড (সিপিএইচজিসি)’র ঋণ চুক্তি সই হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়। চীনের চেংদুতে এই চুক্তি সই হয়। পাকিস্তানের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী হাবকোর সাথে অংশীদারী ভিত্তিতে ‘চায়না পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং লিমিটেড’র জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি সিপিএইচজিসি এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। প্রকল্পের ৭৪ শতাংশের মালিক হবে চীনা কোম্পানি। বাকি ২৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে হাবকোর।
দুটি ৬৬০ মেগাওয়াট কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি নিজস্ব জেটি নির্মাণে খরচ হবে ২ বিলিয়ন ডলার।
এই প্রকল্পের বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু হলে প্রতিবছর নয় কোটি কিলোওয়াট-বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। যা পাকিস্তানে চল্লিশ লাখ পরিবারের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
কনসোর্টিয়ামের অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অফ চায়না, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ চায়না, চায়না কন্সট্রাকশনস ব্যাংক ও ব্যাংক অফ কমিউনিকেশনস।
সিপিআইএইচে’র চেয়ারম্যান ইয়ু বিং বলেন, অঞ্চল ও সড়ক উদ্যোগের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) নির্মাণে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে সিপিআইএইচ।
বিং বলেন, সিপিএইচজিসি’র প্রকল্পটি সিপিইসির অধীনে একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃত এবং দুদেশের সরকার এর উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। সিপিএইচজিসি প্রকল্প পাকিস্তানের বিদ্যুৎ সংকটের কার্যকর সমাধান করবে। সরকারের আয়কর বৃদ্ধি এবং জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে, স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়ন, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখাতে সাহায্য করবে।
শেয়ারহোল্ডার লোন হিসেবে সিপিআইএইচ প্রকল্প নির্মাণের জন্য এখন পর্যন্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এটি প্রধানত উন্নয়ন, নির্মাণ, অপারেশন, বিদেশী বিনিয়োগ এবং অর্থায়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলোর অপারেশনে কাজ করে।
চীনের ২৩টি প্রদেশে এবং হংকং ও ম্যাকাওয়ে কোম্পানির ১৮.৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ আছে। এরই মধ্যে তারা পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও জার্মানিতে বিনিয়োগ করেছে। ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ সিপিআইএইচ’র প্রকল্পগুলোর মোট সক্ষমতা ছিল ২৮,১১০ মেগাওয়াট।
চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ১৯টি প্রকল্পে প্রায় ৭.৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে এ ব্যাংক পাকিস্তান অর্থ মন্ত্রণালয়কে ১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং হাবিব ব্যাংক লিমিটেডকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ